পুরান ঢাকা

পুরান ঢাকা: ঐতিহ্যের ধারক, সংস্কৃতির আধার

পুরান ঢাকা, ঢাকা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র, ঐতিহাসিক স্মৃতি ও জীবন্ত সংস্কৃতির এক অসাধারণ সমন্বয়। গেন্ডারিয়া ফরিদাবাদ থেকে হাজারীবাগ ট্যানারি মোড় পর্যন্ত পশ্চিমে এবং ঢাকা সদরঘাট থেকে নবাবপুর পর্যন্ত দক্ষিণে বিস্তৃত এই অঞ্চলটি শুধুমাত্র ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্যই নয়, এর জীবন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, এবং স্বাতন্ত্র্যসূচক জনজীবনের জন্যও বিখ্যাত।

ঐতিহাসিক পটভূমি:

প্রাচীন বঙ্গ ও গঙ্গাঋদ্ধি সাম্রাজ্যের অধীনে ৫০০ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা ঢাকার নামকরণের ইতিহাসে বিভিন্ন মত রয়েছে। একটি প্রচলিত কাহিনী বলছে, সেন রাজা বল্লাল সেনের ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠার ফলে এ অঞ্চলের নাম ঢাকা হয়। আরেকটি মতে, ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ঢাকাকে সুবাহ্ বাংলার রাজধানী ঘোষণা করার পর সুবাদার ইসলাম খানের ঢাক বাজানোর নির্দেশের ফলে ‘ঢাকা’ নামটি প্রচলিত হয়। মুঘল আমলে কিছু সময় এটি জাহাঙ্গীরনগর নামেও পরিচিত ছিল।

ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাজন:

পুরান ঢাকা ৮টি মেট্রোপলিটন থানা (হাজারীবাগ, চকবাজার, লালবাগ, বংশাল, কোতোয়ালী, ওয়ারী, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া) নিয়ে গঠিত এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত। এর পশ্চিমে মোহাম্মদপুর, উত্তরে ধানমন্ডি, শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, পূর্বে যাত্রাবাড়ী, এবং দক্ষিণে কামরাঙ্গীরচর অবস্থিত।

জনজীবন ও অর্থনীতি:

পুরান ঢাকার জনজীবন অত্যন্ত জীবন্ত ও বর্ণিল। রিকশা, টেঙ্গা, ঘোড়ার গাড়ি, বাস, টেম্পো সহ বিভিন্ন যানবাহনের সমারোহে এখানকার যানজটের অভিজ্ঞতা অসাধারণ। এটি বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। চকবাজার, মৌলভীবাজার, কাওরান বাজার, হাজারীবাগ (চামড়া শিল্প), ইসলামপুর (থান কাপড়) ইত্যাদি অঞ্চল বৃহৎ বাজার হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় অধিবাসীরা প্রধানত ব্যবসায়ী, বংশপরম্পরাগতভাবে এখানে ব্যবসা চলে আসছে।

সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য:

পুরান ঢাকার অধিবাসীরা ঢাকাইয়া কুট্টি উপভাষায় কথা বলে, যেখানে আরবি, ফার্সি ও উর্দুর প্রভাব লক্ষ্যণীয়। মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এক অসাধারণ সমন্বয় এখানে দেখা যায়। ঐতিহ্যবাহী মুঘল খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব (ঈদ, দুর্গা পূজা, পহেলা বৈশাখ, পৌষ সংক্রান্তি, আশুরা) এখানে যথাযথভাবে পালিত হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

দর্শনীয় স্থান:

সদরঘাটের নৌকাঘাট, ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির, এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা পুরান ঢাকাকে দর্শনীয় করে তুলেছে।

সমাপ্তি:

পুরান ঢাকা বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতীক। এর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং অর্থনীতির সাথে একাত্মতা পুরান ঢাকাকে করে তুলেছে অনন্য।

মূল তথ্যাবলী:

  • পুরান ঢাকা ঢাকা শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্র
  • ৫০০-২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বসতি স্থাপন
  • ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে মুঘল রাজধানী
  • বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র
  • ঐতিহ্যবাহী মুঘল খাবার ও উৎসব
প্রতিষ্ঠান:ঢাকা মহানগর সমিতি