ইসলামপুর: জামালপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা
বাংলাদেশের জামালপুর জেলার অন্তর্গত ইসলামপুর উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক দিক দিয়ে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ৩৫৩.৩১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২৪°৫৭´ থেকে ২৫°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৮´ থেকে ৮৯°৫৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ, দক্ষিণে মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ, পূর্বে শেরপুর সদর ও শ্রীবর্দি এবং পশ্চিমে সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সারিয়াকান্দি উপজেলা ইসলামপুরের সীমান্তবর্তী।
জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ইসলামপুরের জনসংখ্যা ২৯৮৪২৯; যার মধ্যে পুরুষ ১৪৮৪৩৯ এবং মহিলা ১৪৯৯৯০। জনসংখ্যার প্রায় অধিকাংশই মুসলমান (২৯৪১৬১), এবং ক্ষুদ্রসংখ্যক হিন্দু (৪১৪৬), খ্রিস্টান (৩) ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী (১১৯) রয়েছে।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
ইসলামপুর উপজেলা যমুনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও বাঙ্গালী নদীর তীরে অবস্থিত। বামনা বিল, বাকর বিল, শিংভাঙ্গা বিল, হাসাল বিল, বানুর বিল, চিলমারী ও রিয়ার বিল এবং কাটাখালী ও দশানী খাল উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
ঐতিহাসিক তথ্য:
ঐতিহাসিকদের ধারণা, সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে বাংলার সুবাদার ইসলাম খানের নামানুসারে এই স্থানের নামকরণ হয় ইসলামপুর। উপজেলার প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ হিসেবে হযরত শাহ্ কামালের (রঃ) মাযার (দুরমুঠ), প্রদ্যোৎঠাকুরের কুঠিবাড়ি, জিউ মন্দির, কালী মন্দির, দূর্গাবাড়ি এবং ইটাপীরের মাযার উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধে ইসলামপুরের অবদান:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ইসলামপুরের মুক্তিযোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তারা ব্রহ্মপুত্র নদীপথে পাকবাহিনীর নৌযান আক্রমণ করে তাদের অভিযানে বিঘ্ন ঘটাতো এবং বুরুঙ্গি বিল ও ইসলামপুর এক্সচেঞ্জ অফিসে অভিযান পরিচালনা করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৩টি স্থানে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন:
ইসলামপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, সরিষা, আখ, আলু, ডাল, বেগুন, শাকসবজি ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল। অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে ব্যবসা, চাকরি, নির্মাণ, পরিবহন ও যোগাযোগ। উপজেলার সব ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন, তবে ৩৮.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
শিক্ষার হার ৩০.১%। উপজেলায় ৮টি কলেজ, ৩৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৮৬টি মাদ্রাসা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঢেংগারগড় নুরুল হুদা আলিম মাদ্রাসা, ইসলামপুর নেকজাহান উচ্চ বিদ্যালয়, ইসলামপুর জে জে কে এম গার্লস হাই স্কুল এন্ড কলেজ। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রন্থাগার, ক্লাব, সিনেমা হল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
উপসংহার:
ইসলামপুর উপজেলা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমন্বয়ে গঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এখানকার অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করা জরুরী।