নাটোর ও কুষ্টিয়া: দুই জেলার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক যাত্রা
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হলো নাটোর ও কুষ্টিয়া। ঐতিহাসিক ঘটনাবলী, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য দুটি জেলাই সমানভাবে সমৃদ্ধ। এই প্রবন্ধে আমরা নাটোর ও কুষ্টিয়ার ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করবো।
নাটোর:
ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন: নাটোর জেলা রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত। এর উত্তরে নওগাঁ ও বগুড়া, দক্ষিণে পাবনা ও কুষ্টিয়া, পূর্বে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ এবং পশ্চিমে রাজশাহী জেলা অবস্থিত। জেলার আয়তন প্রায় ১৯০৫.০৫ বর্গ কিলোমিটার।
জনসংখ্যা ও জনসংখ্যার ঘনত্ব: ২০২২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী নাটোরের জনসংখ্যার তথ্য উল্লেখযোগ্য নয়।
অর্থনীতি: ধান চাষ নাটোরের প্রধান কৃষিকাজ। এছাড়াও রসুন, ইক্ষু, গম, ভুট্টা, আখ, পান প্রভৃতি ফসল উৎপাদিত হয়। দুইটি চিনিকল, ডিস্টিলারী, প্রাণ জুসের কারখানা সহ বেশ কিছু শিল্প কারখানাও এখানে রয়েছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: অষ্টাদশ শতকে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। রাণী ভবানী, নাটোর রাজবাড়ী, উত্তরা গণভবন, চলনবিল, হালতি বিল ইত্যাদি নাটোরের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান। ১৮৫৯-১৮৬০ সালে নাটোরে নীল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের ৫ মে গোপালপুরের চিনিকলে পাকবাহিনীর গণহত্যা ঘটে, যার স্মৃতি রক্ষার্থে শহীদ মিনার ও রেলস্টেশনের নামকরণ করা হয় আজিমনগর।
সাংস্কৃতিক দিক: নাটোরের লোকসংস্কৃতি সমৃদ্ধ। মাদার গানের মূল উপজীব্য হলো শাহ মাদার নামক পীরের গুণগান।
কুষ্টিয়া:
ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন: কুষ্টিয়া জেলা খুলনা বিভাগে অবস্থিত। এর উত্তরে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা, দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ, পূর্বে রাজবাড়ী এবং পশ্চিমে মেহেরপুর ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত। জেলার আয়তন প্রায় ১,৬০৮.৮০ বর্গকিলোমিটার।
জনসংখ্যা ও জনসংখ্যার ঘনত্ব: ২০২২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী কুষ্টিয়ার জনসংখ্যা ২,১৪৯,৬৯২।
অর্থনীতি: কৃষিকাজ কুষ্টিয়ার অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। ধান, পাট, তামাক, পান, আখ প্রভৃতি ফসল উৎপাদিত হয়। এছাড়াও টোব্যাকো প্রক্রিয়াজাতকরণ, কেবল তৈরি, টেক্সটাইল ও হোসিয়ারী শিল্প কারখানা রয়েছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: কুষ্টিয়া একটি প্রাচীন জনপদ। ১৭২৫ সালে নাটোর জমিদারীর অধীনে ছিল। ব্রিটিশ আমলে কুষ্টিয়া নগরায়ন শুরু হয়। ১৮৬১ সালে নীল বিদ্রোহের কারণে কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪৭ সালে পৃথক জেলা হিসেবে গঠিত হয়।
সাংস্কৃতিক দিক: কুষ্টিয়া বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। লালন শাহের মাজার, শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এখানকার উল্লেখযোগ্য স্থান। কুষ্টিয়ার ভাষা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রমিত রূপ বলা হয়। লালন শাহের আধ্যাত্মিক গান আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে।
উপসংহার:
নাটোর ও কুষ্টিয়া দুটিই ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ জেলা। এর ঐতিহাসিক ঘটনা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।