ত্রিপুরা সম্প্রদায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তারা উত্তর-পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করে। মাণিক্য রাজবংশের মাধ্যমে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বহু বছর ধরে ত্রিপুরা রাজ্য শাসন করেছে ১৯৪৯ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত, যখন রাজ্যটি ভারতের সাথে একীভূত হয়।
ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নিজস্ব অনন্য সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাস রয়েছে। তাদের প্রভাব বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং সিলেট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের আগে পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল। ১৫১২ সালে, মুঘলদের পরাজিত করার সময় ত্রিপুরা রাজ্য তার শীর্ষে ছিল। মাণিক্য রাজবংশ ১৮ শতক পর্যন্ত কয়েক শতাব্দী ধরে ত্রিপুরা শাসন করেছে, পরে সমতল টিপরা ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হলেও পার্বত্য অংশ স্বাধীন রাজকীয় রাজ্য হিসেবে টিকে ছিল। ১৪ অক্টোবর ১৯৪৯ সালে, পার্বত্য টিপ্পারা ত্রিপুরা রাজ্য হিসাবে স্বাধীন ভারতে একীভূত হয়।
ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন এটি মহাভারত যুগের রাজা যযাতির বংশধর রাজা ত্রিপুরের নামানুসারে এসেছে। আবার অন্যদের মতে, 'ককবরক' ভাষার 'তোয়' (পানি) এবং 'প্রা' (মোহনা) শব্দ থেকে ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি হয়েছে। আরও কিছু মতবাদ রয়েছে যা ত্রিবেগ এবং কিরাত জনজাতির মিলনের সাথে নামটির উৎপত্তিকে সংযুক্ত করে।
ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী নিজেদের চন্দ্রবংশোদ্ভুত ক্ষত্রিয় বলে দাবী করে, যদিও নৃতাত্ত্বিকভাবে তারা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত। তারা ককবরক ভাষায় কথা বলে যা তিব্বত-বর্মন ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। ত্রিপুরী হল ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা।
ধর্মের দিক থেকে, ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই হিন্দু, কিছু অংশ খ্রিস্টান এবং খুব সামান্য সংখ্যক বৌদ্ধ।
ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সামাজিক কাঠামো পিতৃতান্ত্রিক। তাদের রয়েছে অনন্য ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান, উৎসব এবং পোশাক-আশাক। ত্রিপুরী সংস্কৃতির বৈচিত্র্য তাদের নাচ, গান, উৎসব এবং প্রথাগুলিতে প্রতিফলিত হয়।
বাংলাদেশের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করে, কিন্তু কুমিল্লা, সিলেট এবং অন্যান্য জেলায়ও তাদের বসতি রয়েছে। তাদের ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মূল ভারতীয় জনগোষ্ঠীর তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা।