জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২:৪৭ পিএম

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা: একটি বিস্তারিত বিবরণ

জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলা উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা। ১৬৬.২৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২৪°৫৯´ থেকে ২৫°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৮´ থেকে ৮৯°১৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে পাঁচবিবি এবং গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা, দক্ষিণে ক্ষেতলাল ও শিবগঞ্জ (বগুড়া) উপজেলা, পূর্বে শিবগঞ্জ (বগুড়া) ও গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা এবং পশ্চিমে ক্ষেতলাল ও জয়পুরহাট সদর উপজেলা কালাই উপজেলার সীমানা গঠন করে।

জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কালাই উপজেলার জনসংখ্যা ছিল ১৪৩১৯৭ জন, যার মধ্যে ৭০৮৬০ পুরুষ এবং ৭২৩৩৭ মহিলা। ধর্মীয় বিভাজনে ১৩৬৪২৭ মুসলিম, ৬৬৬০ হিন্দু, ২ বৌদ্ধ, ২২ খ্রিস্টান এবং ৮৬ জন অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এছাড়াও সাঁওতাল, বুনো প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে এই উপজেলায়।

প্রশাসনিক ইতিহাস: ১৯ আগস্ট ১৯৮১ সালে কালাই থানা গঠিত হয় এবং ৩ জুলাই ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। পূর্বে বগুড়া জেলার অন্তর্গত থাকলেও, ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সালে এটি জয়পুরহাট জেলার সাথে যুক্ত হয়।

নদ-নদী ও জলাশয়: হরবতী ও নাগর নদী কালাই উপজেলার প্রধান নদী।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ: নান্দাইল দিঘি, হারুঞ্জা ধাপ ও মাযার (হারুঞ্জা), বলিগ্রাম রাজবাড়ি, বিয়ালা প্রাচীন কীর্তি ও তাম্রশাসন (মাত্রাই) এই উপজেলার উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস: মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী কালাইয়ে তাদের স্থানীয় সহযোগীদের সাহায্যে জনগণের উপর নির্যাতন চালায় এবং বাড়িঘর লুটপাট করে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করে এবং পাকবাহিনীর ক্যাম্পেও হামলা চালায়। বাখড়া ও নানগোলায় মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়।

শিক্ষা: উপজেলার গড় শিক্ষার হার ৪৯.৮% (পুরুষ ৫৪.৭%, মহিলা ৪৫.১%)। এখানে ২টি কলেজ, ২টি কারিগরী কলেজ, ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি কমিউনিটি স্কুল এবং ৩৩টি মাদ্রাসা রয়েছে। কালাই মঈন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠিত ১৯১৩) একটি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সংস্কৃতি ও পর্যটন: কালাইতে ১টি লাইব্রেরি, ৩৭টি ক্লাব এবং ২টি সিনেমা হল রয়েছে। নান্দাইল দিঘি (হারুঞ্জা) একটি দর্শনীয় স্থান।

অর্থনীতি: কৃষি কালাই উপজেলার অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। ৭৬.৭২% জনগোষ্ঠীর আয়ের উৎস কৃষি। প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, আখ, সরিষা এবং বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি। প্রধান ফল আম, কাঁঠাল ও পেঁপে। আলু, ধান ও চাল প্রধান রপ্তানি দ্রব্য। উপজেলার অকৃষি কর্মসংস্থানের মধ্যে আছে অকৃষি শ্রমিক (২.২৩%), শিল্প (০.২৪%), ব্যবসা (৮.৭৮%), পরিবহন ও যোগাযোগ (৩.০৪%), চাকরি (২.৯২%), নির্মাণ (০.৫১%), ধর্মীয় সেবা (০.১%) এবং অন্যান্য (৫.৪৬%)।

যোগাযোগ: উপজেলায় ৮৫ কিমি পাকা এবং ১৫৪.৫ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে।

শিল্প ও কুটির শিল্প: কালাইয়ে কোল্ড স্টোরেজ এবং আইস ফ্যাক্টরি রয়েছে। স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, লৌহশিল্প, বেতের কাজ, বাঁশের কাজ এবং কাঠের কাজ উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা: উপজেলায় ১৫টি হাটবাজার ও ৩টি মেলা রয়েছে। পুনট হাট, মোলামগাড়ি হাট, কালাই হাট ও হারুঞ্জা হাট এবং পুনট মেলা, কালাই মেলা ও মোলামগাড়ি মেলা উল্লেখযোগ্য।

বিদ্যুৎ, পানীয়জল ও স্যানিটেশন: উপজেলার সকল ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন, তবে ৫৫.৩% পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। ৯৫.৫% পরিবার নলকূপ, ২.২% ট্যাপ এবং ২.৩% অন্যান্য উৎস থেকে পানীয়জল পায়। ৫১.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে, ২৫.৩% অস্বাস্থ্যকর এবং ২৩.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্য: উপজেলায় ১টি হাসপাতাল, ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৫টি গ্রোথ সেন্টার, ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ১টি ক্লিনিক রয়েছে।

এনজিও: ব্র্যাক, আশা, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, প্রশিকা প্রভৃতি এনজিও কালাই উপজেলায় কাজ করে। [তথ্যসূত্র: আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কালাই উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭]

মূল তথ্যাবলী:

  • কালাই উপজেলা জয়পুরহাট জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা।
  • ১৯৮৩ সালে থানা হতে উপজেলায় রূপান্তর।
  • ১৪৩,১৯৭ জন জনসংখ্যা (২০১১ সালের আদমশুমারি)।
  • কৃষি অর্থনীতির মূল ভিত্তি।
  • হরবতী ও নাগর নদী প্রধান নদী।
  • নান্দাইল দিঘি, হারুঞ্জা ধাপ ও মাযার উল্লেখযোগ্য প্রত্নস্থল।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা

৩ জানুয়ারি, ২০২৫

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কুজাইল করিমপুর গ্রামের আলুক্ষেতে মালেক খান ফটুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।