ইরাক

ইরাক: মেসোপটেমিয়ার উত্তরাধিকার ও আধুনিক সংগ্রামের দেশ

ইরাক, আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাক প্রজাতন্ত্র, পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ৪ কোটি ৬০ লক্ষেরও অধিক জনসংখ্যার সাথে এটি বিশ্বের ৩৫তম জনবহুল দেশ। এর রাজধানী ও বৃহত্তম শহর হলো বাগদাদ। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী উর্বর সমভূমি মেসোপটেমিয়া নামে পরিচিত, যা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতার জন্মস্থান। ইরাকের উত্তরে তুরস্ক, দক্ষিণে সৌদি আরব, পূর্বে ইরান, দক্ষিণ-পূর্বে কুয়েত ও পারস্য উপসাগর এবং পশ্চিমে জর্ডান ও সিরিয়া অবস্থিত।

ইতিহাস:

খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ বছর আগে মেসোপটেমিয়ায় সুমেরীয়, অ্যাসিরীয়, ব্যাবিলনীয়, ও ক্যালডীয় সভ্যতা গড়ে উঠে। এই অঞ্চলটি লিখন, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ও আইন প্রণয়নের আদি উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত। আব্বাসীয় খিলাফতের আমলে বাগদাদ বিশ্বের একটি বৃহৎ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। পরে মঙ্গোল আক্রমণে বাগদাদ ধ্বংস হয় এবং এর পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে ইরাক বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অধীনে থাকে। প্রথম ও দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ (১৯৯০-১৯৯১ ও ২০০৩), সাদ্দাম হুসেনের শাসনামল, ও আইএসআইএসের উত্থান ইরাকের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ভূগোল ও জনসংখ্যা:

ইরাক মূলত মরুময় দেশ, তবে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরবর্তী অঞ্চল উর্বর। দেশটিতে পর্বতময় এলাকাও রয়েছে। জনসংখ্যা প্রধানত আরব, কুর্দি, তুর্কমেন, ইয়াজিদি, অ্যাসিরীয়, আর্মেনীয়, ও মন্দীয়দের নিয়ে গঠিত। ধর্মীয়ভাবে ইসলাম (শিয়া ও সুন্নি উভয়), খ্রিস্টধর্ম, ইয়াজিদি ধর্ম প্রভৃতি অনুসারী রয়েছে।

অর্থনীতি:

ইরাকের অর্থনীতি প্রধানত তেলের উপর নির্ভরশীল। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। তবে অর্থনীতির অন্যান্য খাতের অপ্রতুল উন্নয়ন, বেকারত্ব, ও দুর্নীতি ইরাকের উন্নয়নে বাধা হিসেবে কাজ করে। কৃষিক্ষেত্র ও পর্যটন ইরাকের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাত।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:

ইরাকের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, সাহিত্য, সঙ্গীত, ও কারুশিল্প ইরাকের পরিচয়। বাগদাদ, মসুল, ও নীনুইয়া ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমান অবস্থা:

দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ, অস্থিরতা, ও সন্ত্রাসবাদ ইরাকের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে ইরাক সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। তবে, জলবায়ু পরিবর্তন, জল সংকট, দুর্নীতি, ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ইরাকের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ইরাক মেসোপটেমিয়ার উত্তরাধিকার বহন করে।
  • টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী ইরাকের অর্থনীতি ও ভূগোলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • তেল ইরাকের অর্থনীতির মূল ভিত্তি।
  • যুদ্ধ ও অস্থিরতা ইরাকের উন্নয়নে বড় বাধা।
  • সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ইরাকের পরিচয়।