আটঘরিয়া: পাবনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের পাবনা জেলার অন্তর্গত আটঘরিয়া উপজেলা অঞ্চলের দিক থেকে যেমন সমৃদ্ধ, তেমনি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বেশ উল্লেখযোগ্য। ১৩ জানুয়ারি ১৯১৫ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। আটঘরিয়া উপজেলার আয়তন ১৮৬.১৫ বর্গ কিমি এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ১৫৭২৫৪। পুরুষ ও মহিলা জনসংখ্যা যথাক্রমে ৭৮২৩৭ ও ৭৯০১৭। জনসংখ্যার অধিকাংশই মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরাও বসবাস করেন এখানে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সম্পদ:
২৪°০৩´ থেকে ২৪°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১০´ থেকে ৮৯°২৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত আটঘরিয়া উপজেলা উত্তরে চাটমোহর ও ফরিদপুর উপজেলা, পূর্বে সাঁথিয়া উপজেলা, দক্ষিণে পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলা এবং পশ্চিমে বড়াইগ্রাম উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ইছামতি, চিকনাই ও কামালা নদী এ উপজেলার প্রধান জলাশয়। আটঘরিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও জলাশয় এটিকে কৃষিভূমি হিসাবে সমৃদ্ধ করেছে। প্রধান কৃষি ফসলের মধ্যে ধান, পাট, পান, ডাল, সরিষা, বেগুন, আলু, কাঁচা মরিচ, পটল, পিঁয়াজ, রসুন এবং বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি উল্লেখযোগ্য। আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লিচু, পেয়ারা ইত্যাদি ফলমূল এখানে উৎপাদিত হয়। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও এখানে ব্যাপকভাবে রয়েছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড:
আটঘরিয়ার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ৭৩.৭৬% জনগোষ্ঠীর আয়ের উৎস কৃষিকাজ। অকৃষি শ্রমিক, ব্যবসা, পরিবহন, চাকুরী, শিল্প, নির্মাণ, ধর্মীয় সেবা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁতশিল্প, বাঁশশিল্প, বেতের কাজ, কাঠের কাজ এবং রেশম উৎপাদন শিল্প এখানকার প্রধান কুটিরশিল্প।
ঐতিহাসিক ঘটনা ও প্রত্নসম্পদ:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আটঘরিয়া উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। মাজপাড়া ইউনিয়নের বংশীপাড়া ঘাটে পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১ জন পাক অফিসার নিহত হয় এবং ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সহ ৩ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। এছাড়াও উপজেলার দেবোত্তর দক্ষিণ পাড়াস্থ ডাক্তার মগরেবের বাঁশঝাড়ে ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। খানবাড়ি মসজিদ, মৃধার মসজিদ এবং বেরুয়ান জামে মসজিদ এ উপজেলার উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
আটঘরিয়ার গড় শিক্ষার হার ৪৩.৭%। খিদিরপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়, দেবোত্তর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়, আটঘরিয়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়, খিদিরপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ, আটঘরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, দেবোত্তর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, দেবোত্তর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ত্বাহা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ধলেশ্বর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র রয়েছে।
যোগাযোগ:
আটঘরিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। পাকা রাস্তা, আধাপাকা রাস্তা, কাঁচা রাস্তা, রেলপথ এবং নৌপথ যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার:
আটঘরিয়া উপজেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, কৃষি সম্পদ, ঐতিহাসিক ঘটনা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য। এর সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির মাধ্যমে আরও অগ্রগতির সম্ভাবনা রয়েছে।