আটঘরিয়া উপজেলা: পাবনার একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল
বাংলাদেশের পাবনা জেলার অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল আটঘরিয়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য এটি সুপরিচিত। আটঘরিয়া উপজেলার অবস্থান ২৪°০৩´ থেকে ২৪°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১০´ থেকে ৮৯°২৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। এর আয়তন ১৮৬.১৫ বর্গ কিলোমিটার। উত্তরে চাটমোহর ও ফরিদপুর উপজেলা, দক্ষিণে পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলা, পূর্বে সাঁথিয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে ঈশ্বরদী উপজেলা ও নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলা অবস্থিত।
ঐতিহাসিক তথ্য:
ঐতিহাসিকদের মতে, মহাভারতকালে পান্ডব ভ্রাতৃগণের রাজত্ব ছিল এই অঞ্চলে। ১৩ জানুয়ারি ১৯১৫ সালে আটঘরিয়া থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালে মাজপাড়া ইউনিয়নের বংশীপাড়া ঘাটে পাকিস্তানি সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষে একজন পাকিস্তানি অফিসার নিহত হন এবং ১২ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। দেবোত্তর দক্ষিণ পাড়ায় গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে রয়েছে খানবাড়ি মসজিদ, মৃধার মসজিদ এবং বেরুয়ান জামে মসজিদ।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, আটঘরিয়ার জনসংখ্যা ১,৫৭,১২৫৪। উপজেলার প্রধান নদী হল ইছামতি, চিকনাই ও কামালা।
অর্থনীতি:
আটঘরিয়ার অর্থনীতি প্রধানত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, ভুট্টা, আঁখ, পান, ডাল, সরিষা, বেগুন, আলু, কাঁচা মরিচ, পটল, পিঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি ইত্যাদি ফসল উৎপাদিত হয়। তাঁতশিল্প, বাঁশশিল্প, বেতের কাজ, কাঠের কাজ, রেশম উৎপাদন শিল্প প্রভৃতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানাও রয়েছে।
শিক্ষা:
উপজেলায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। খিদিরপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৯৫), দেবোত্তর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৯৫), আটঘরিয়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৭২), খিদিরপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ (২০০৩), আটঘরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৪), দেবোত্তর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৬), দেবোত্তর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮০), ত্বাহা ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯২৩), একদন্ত ডিগ্রি কলেজ, ধলেশ্বর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯২২) উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার গড় হার ৫৬.৭%।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ:
ইশারত আলী (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান), মাওলানা জহুরুল ইসলাম খাঁন (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান), মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন রেনু (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান), মুহাম্মদ লোকমান হোসাইন (শিক্ষাবিদ), জহুরুল ইসলাম (মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার), আমিনুল ইসলাম (সাবেক মেয়র) প্রমুখ।
আটঘরিয়া উপজেলার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য আমরা আপনাকে পরে জানাতে পারব।