প্রকৃতির অপরূপ নিদর্শন হালদা নদীর চরাঞ্চল:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত হালদা নদী, এর চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত একটি জীবন্ত বাস্তুতন্ত্র। ১০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সর্পিলাকার নদীর চরাঞ্চল বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আশ্রয়স্থল। নদীর উৎপত্তিস্থল পার্বত্য চট্টগ্রামের বাটনাতলী পাহাড়, ফটিকছড়ি উপজেলার উত্তর-পূর্ব কোণ দিয়ে নদীটি চট্টগ্রাম জেলায় প্রবেশ করে। ফটিকছড়ির বিবিরহাট, নাজিরহাট, সাত্তারঘাট, হাটহাজারী, রাউজান এবং চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও-বাকলিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কালুরঘাটের নিকটে কর্ণফুলী নদীর সাথে মিলিত হয়।
হালদা নদীর চরাঞ্চলের গুরুত্ব:
হালদা নদী বিশ্বে একক প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত। এপ্রিল-জুন মাসে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস প্রভৃতি কার্প জাতীয় মাছ এখানে ডিম ছাড়ে। এই ডিম ছাড়ার বিশেষ সময়কে “জো” বলা হয়। অমাবস্যা বা পূর্ণিমার রাতে বজ্রপাতসহ প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় নদীর জোয়ার-ভাটার স্থির অবস্থায় মাছগুলি ডিম ছাড়ে। স্থানীয় জেলেরা এই ডিম সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করে।
চরাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য:
হালদার চরাঞ্চল নদীর তীরবর্তী অঞ্চল, বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ, পোকামাকড়, পাখি, সরীসৃপ এবং অন্যান্য প্রাণীর বাসস্থান। এই চরাঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র নদীর জলের উপর নির্ভরশীল।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
হালদা নদীর চরাঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। মৎস্য চাষ, ডিম সংগ্রহ, কৃষিকর্ম, এবং নৌকা চলাচল চরাঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য জীবিকার প্রধান উৎস। চট্টগ্রাম শহরের পানির চাহিদাও এই নদী থেকে পূরণ হয়।
সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা:
দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অনিয়ন্ত্রিত নদী ভাঙ্গন, দূষণ এবং অবৈধ মাছ ধরা হালদা নদীর চরাঞ্চলের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এই গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ।