হাবিবুর রহমান নামটি দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। একজন হলেন হাকিম হাবিবুর রহমান (১৮৮১-১৯৪৭) এবং অপরজন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (১৯২৮-২০১৪)।
- *হাকিম হাবিবুর রহমান:** ঢাকার ছোট কাটরা মহল্লায় জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তি ছিলেন একজন খ্যাতনামা ইউনানী চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। তিনি ঢাকা মাদ্রাসা ও কানপুর দারুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন এবং লক্ষ্ণৌ, দিল্লি ও আগ্রায় ইউনানী চিকিৎসাবিদ্যায় প্রশিক্ষণ নেন। ১৯০৪ সালে তিনি চিকিৎসা পেশায় যোগদান করেন। নওয়াব স্যার খাজা সলিমুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তিনি ১৯৩০ সালে ঢাকায় ‘তিবিবয়া হাবিবিয়া কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৯ সালে তাঁকে ‘শেফা-উল-মুলক’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি ‘আল-মাশরিক’ ও ‘যাদু’ নামক উর্দু পত্রিকার সম্পাদনা ও প্রকাশনায় অংশ নেন এবং ‘আহসান’ ছদ্মনামে লেখালেখি করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে ‘ঢাকা পঁঞ্চাশ বারাস পহলে’। তিনি পান্ডুলিপি, মুদ্রা ও যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ করতেন এবং ঢাকা জাদুঘরে ২৩১টি পুরানো মুদ্রা দান করেন। তাঁর অধিকাংশ রচনা ও সংগ্রহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে।
- *বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান:** পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুরে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তি ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও বিচারক। ঢাকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভ করেন এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগদান করেন এবং ১৯৭৬ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি হন। তিনি ১৯৯০-৯১ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এবং ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। তিনি বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন প্রখ্যাত লেখকও ছিলেন এবং বহু গ্রন্থ রচনা করেন, যার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর লেখা গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেন।