মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা: একটি বিস্তারিত ঝলক
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত মানিকগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল হরিরামপুর। ২৪৪.৩০ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২৩°৩৮´ থেকে ২৩°৪৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫০´ থেকে ৯০°০৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে শিবালয়, ঘিওর ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা, দক্ষিণে চরভদ্রাসন ও ফরিদপুর সদর উপজেলা, পূর্বে মানিকগঞ্জ সদর, নবাবগঞ্জ (ঢাকা) ও দোহার উপজেলা এবং পশ্চিমে শিবালয়, গোয়ালন্দঘাট এবং ফরিদপুর সদর উপজেলা— এই সকল এলাকা হরিরামপুরের সীমান্তবর্তী।
জনসংখ্যা ও গঠন:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী হরিরামপুরের জনসংখ্যা ১৩৯,৩১৮। এদের মধ্যে পুরুষ ৬৫,৮১৫ এবং মহিলা ৭৩,৫০৩। ধর্মীয় ভাগে মুসলিম ১২৩,১৯৪, হিন্দু ১৬,১০৫, খ্রিস্টান ১১ এবং অন্যান্য ৮।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জলাশয়:
পদ্মা ও ইছামতি নদী, ভাতশালা বিল ও ঘারিলপুর বিল হরিরামপুরের উল্লেখযোগ্য জলাশয়। এই জলাশয়গুলি উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
প্রশাসনিক ইতিহাস:
১৮৪৫ সালে হরিরামপুর থানা গঠিত হয়। ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
ঐতিহাসিক নিদর্শন:
ঝিটকার লোকমানিয়া দরগাহ এবং যাত্রাপুরের মুসা খাঁ’র দুর্গ হরিরামপুরের প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সুতালড়ি ও হরিণায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র সংঘর্ষ হয়। ১৩ ডিসেম্বর হরিরামপুর শত্রুমুক্ত হয়।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান:
উপজেলায় ১৬১টি মসজিদ, ৩টি মাযার, ৩টি দরগাহ, ৭৩টি মন্দির এবং ২টি তীর্থস্থান রয়েছে।
শিক্ষা ব্যবস্থা:
শিক্ষার হার ৪৮.৪% (পুরুষ ৪৯.৭%, মহিলা ৪৭.২%)। ৩টি কলেজ, ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১টি মাদ্রাসা রয়েছে। বিচারপতি নুরুল ইসলাম কলেজ, এমএ রউফ ডিগ্রি কলেজ, ঝিটকা খাজা রহমত আলী ডিগ্রি কলেজ উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতি ও কৃষি:
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি (৫৪.৫৪%), ব্যবসা (১৩.৭৩%), চাকরি (১৩.১৮%)। ধান, পাট, গম, সরিষা, পিঁয়াজ, রসুন, চীনাবাদাম প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, পেঁপে প্রধান ফল।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
৭৬ কিমি পাকা রাস্তা, ৭ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ২৬৪ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। ২৫ কিমি নৌপথও রয়েছে।
শিল্প ও কুটিরশিল্প:
আটাকল, ময়দাকল, বরফকল, করাতকল, বিড়ি কারখানা এবং তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ উল্লেখযোগ্য।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা:
১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৪টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ১টি এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
১৮৯৭, ১৯৪৩ ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এবং ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প উপজেলার জন্য ধ্বংসাত্মক ছিল।
এনজিও:
ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা সহ আরও অনেক এনজিও হরিরামপুরে কাজ করে।
উপসংহার:
হরিরামপুর উপজেলা মানিকগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জনজীবনকে ধারণ করে এই উপজেলা আগামী দিনগুলিতে অধিক উন্নত হতে পারে। তবে, এই লেখায় হরিরামপুর উপজেলার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নাই। ভবিষ্যতে অধিক তথ্য প্রাপ্ত হলে এই লেখা আপডেট করা হবে।