স্বরূপকাঠি উপজেলা: একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ
পিরোজপুর জেলার অন্তর্গত স্বরূপকাঠি উপজেলা (পূর্ব নাম: নেছারাবাদ) এর আয়তন ২০০.৩৩ বর্গ কিলোমিটার। ২২°৩৯´ থেকে ২২°৪৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০০´ থেকে ৯০°১২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এর মধ্যে অবস্থিত এই উপজেলাটি উত্তরে বানারীপাড়া, দক্ষিণে ঝালকাঠি সদর, কাউখালী ও পিরোজপুর সদর, পূর্বে ঝালকাঠি সদর এবং পশ্চিমে নাজিরপুর ও পিরোজপুর সদর উপজেলার সাথে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, উপজেলার জনসংখ্যা ২১১০৩২ জন; এর মধ্যে পুরুষ ১০৩৮২০ জন এবং মহিলা ১০৭২১২ জন। ধর্মীয়ভাবে ১৬৪৭৫৪ জন মুসলিম, ৪৬১৪৫ জন হিন্দু, এবং অতি সামান্য সংখ্যক বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান বাসিন্দা রয়েছে।
স্বরূপকাঠি, কালিগঙ্গা, বাইনাকাঠি, সন্ধ্যা, বেলুয়া নদী এবং গবখানা খাল উপজেলার প্রধান জলাশয়। ১৯০৬ সালে নেছারাবাদ থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে এর নামকরণ করা হয় স্বরূপকাঠি।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, বরছাকাঠি গ্রামের গায়েবী মসজিদ ও তিন গম্বুজ মসজিদ, অলঙ্কারকাঠি গ্রামের সরকার বাড়ির পঞ্চরত্ন মঠ, আটঘর কুড়িয়ানার চক্রবর্তী বাড়ির মন্দির এবং কৌড়িখারা ও রাগবাড়ির রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১১ মে পাকিস্তান সেনাবাহিনী স্বরূপকাঠিতে আক্রমণ করে এবং ব্যাপক লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগানে সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক হাজার নিরীহ লোক নিহত হয় এবং বেশ কয়েকটি স্থানে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়।
শিক্ষার দিক থেকে, স্বরূপকাঠি উপজেলার গড় শিক্ষার হার ৬৮.৬%। স্বরূপকাঠি মহাবিদ্যালয় (১৯৬৫), শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৬), এবং আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কৃষি, ব্যবসা, চাকুরী উপজেলার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস। ধান, পাট, আখ, গম, ডাল, পান, পিঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। ছোবড়া শিল্প, ওয়েল্ডিং কারখানা, লৌহশিল্প, বাঁশের কাজ, বিড়ি শিল্প উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প। উপজেলায় ২৪ টি হাটবাজার ও ৭ টি মেলা রয়েছে।
স্বরূপকাঠি উপজেলা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ১৭৬২ সালের ভূমিকম্প, ১৭৮৭ সালের প্লাবন, এবং পরবর্তীতে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপজেলা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ সীমিত, এবং আর্সেনিক দূষিত পানির সমস্যা ও রয়েছে। তবে বেশ কিছু এনজিও এই উপজেলার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।