নেছারাবাদ

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি), পিরোজপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। ২০০.৩৩ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২২°৩৯´ থেকে ২২°৪৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০০´ থেকে ৯০°১২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে বানারীপাড়া, দক্ষিণে ঝালকাঠি সদর, কাউখালী ও পিরোজপুর সদর, পূর্বে ঝালকাঠি সদর এবং পশ্চিমে নাজিরপুর ও পিরোজপুর সদর উপজেলা নেছারাবাদের সীমান্তবর্তী। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা ছিল ২১১০৩২ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১০৩৮২০ এবং মহিলা ১০৭২১২ জন। ধর্মীয়ভাবে, ১৬৪৭৫৪ জন মুসলমান, ৪৬১৪৫ জন হিন্দু, অল্প সংখ্যক বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান। নেছারাবাদের প্রধান নদী হল স্বরূপকাঠি, কালিগঙ্গা, বাইনাকাঠি, সন্ধ্যা ও বেলুয়া। গবখানা খালও উল্লেখযোগ্য। ১৯০৬ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া নেছারাবাদ ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয় এবং ১৯৮৫ সালে স্বরূপকাঠি থেকে নেছারাবাদ নামকরণ করা হয়।

ঐতিহাসিক দিক থেকে, নেছারাবাদে বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে, যেমন বরছাকাঠি গ্রামের গায়েবী মসজিদ ও তিন গম্বুজ মসজিদ, অলঙ্কারকাঠি গ্রামের পঞ্চরত্ন মঠ, আটঘর কুড়িয়ানার চক্রবর্তী বাড়ির মন্দির এবং কৌড়িখারা ও রাগবাড়ির রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নেছারাবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১১ মে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের শিকার হয় এ উপজেলা। মিয়ারহাট ও ইন্দেরহাট বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। অনেক নিরীহ মানুষ নিহত হয়। আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগানে সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাকা-্ণ্ড সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর কুড়িয়ানা কলেজের পেছনের একটি ডোবা থেকে প্রায় তিনশত মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। আর্যঘর-কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান এবং শর্ষিনার যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের ঘটনা। বরছাকাঠিতে একটি বধ্যভূমি এবং অন্যত্র একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

শিক্ষার দিক থেকে, নেছারাবাদের গড় শিক্ষার হার ৬৮.৬%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে স্বরূপকাঠি মহাবিদ্যালয়, শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ, ফাজিলা রহমান মহিলা কলেজ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ডিগ্রি কলেজ, এবং বেশ কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা। নেছারাবাদের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, আখ, গম, ডাল, পান, পিঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। কলা, পেঁপে, নারিকেল, আমড়া, লেবু, জাম, লিচু, পেয়ারা, সুপারি প্রধান ফল। ছোবড়া শিল্প, ওয়েল্ডিং কারখানা, লৌহশিল্প, বাঁশের কাজ ও বিড়ি শিল্প উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প। নেছারাবাদে ২৪ টি হাটবাজার এবং ৭ টি মেলা রয়েছে। শর্ষিণা পীর সাহেবের বাড়ির মাহফিল এবং করফার ঠাকুর বাড়ি ও আটঘর কুড়িয়ানার চক্রবর্তী বাড়ির শিব চতুর্দশীর মেলা উল্লেখযোগ্য। নেছারাবাদ পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন, তবে পানীয়জলের উৎস হিসেবে নলকূপের উপর নির্ভরতা বেশি। অনেক নলকূপে আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, প্রাইভেট ক্লিনিক এবং কমিউনিটি ক্লিনিক। ১৭৬২ সালের ভূমিকম্প, ১৭৮৭ সালের প্লাবন এবং বিভিন্ন বছরের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস নেছারাবাদের উপর প্রভাব ফেলেছে। বিভিন্ন এনজিও যেমন ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, প্রশিকা, কারিতাস এবং বার্ড এখানে কাজ করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • নেছারাবাদ পিরোজপুরের একটি উপজেলা
  • ২০০.৩৩ বর্গ কিমি আয়তন
  • ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
  • কৃষি ও কুটিরশিল্প অর্থনীতির মূল ভিত্তি
  • ঐতিহাসিক নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।