স্বপন খান: নামের মিলের শিকার একজন দিনমজুরের দীর্ঘ যুদ্ধ
শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৫-এর ঢাকা থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে স্বপন খান নামের একজন দিনমজুরের কাহিনী উঠে এসেছে, যিনি শুধু নামের মিলের কারণে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে একটি অস্ত্র মামলার আসামি হিসেবে জর্জরিত হয়েছেন। ২০১২ সালে গুলশান থানার একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর ২৬ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হলেও, মামলাটি তার ওপর থেকে সরেনি।
শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার মতিসাগর এলাকার বাসিন্দা স্বপন খান মালেক খানের ছেলে। পুলিশের অপরাধ তালিকায় তার নাম নেই। তবে মামলার নথি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর গুলশান থানার একটি অস্ত্র মামলায় আসামি করা হয় ‘স্বপন খান (ওরফে সুমন খান)’। পুলিশের দাবি, নাম ও বাবার নামের মিল থাকার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে, মামলার প্রকৃত আসামি একই উপজেলার হামগাঁও গ্রামের স্বপন খান (ওরফে সুমন খান), যিনি বিভিন্ন মামলায় কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাভোগ করছেন বলে জানা গেছে। মামলা বহন করতে গিয়ে তার পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। পুলিশের গাফিলতিকেই দীর্ঘ ভোগান্তির জন্য দায়ী করছেন আইনজীবী ও স্বজনরা।
স্বপন খানের স্ত্রী হাজেরা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলার প্রকৃত আসামি আমার স্বামী নন। শুধু পুলিশের ভুলের কারণে আমার স্বামী এই মামলার আসামি হয়েছেন। ১২ বছর ধরে মামলার ঘানি টানছি। আমার স্বামী দেশে থাকতে পারেননি। আমাদের সন্তানরা কটূ কথা শুনেছে। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার চাই। একইসঙ্গে ক্ষতিপূরণ চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল বলেন, ‘স্বপন খান আমাদের চোখের সামনে বড় হয়েছে। তার বাবার যা ছিল, মিথ্যা মামলার কারণে তা বিক্রি করে শেষ হয়ে গেছে। শুধু নামের মিল থাকায় এই লোকগুলো হয়রানির শিকার হয়েছে।’
মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুরের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, ‘শুধু নামের ওপর ভিত্তি করে তদন্তকারী কর্মকর্তা তার দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। সঠিকভাবে তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করা সম্ভব ছিল। এটি তার ব্যর্থতা।’ জেলা পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এক ব্যক্তির পরিবর্তে আরেক ব্যক্তির নাম চার্জশিটে আসার বিষয়টি পুলিশ অবগত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে প্রকৃত আসামিকে শনাক্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্বপন খানের পরিবার পুলিশ ও আদালতের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মামলার অব্যাহতি চাইছে। আমরা আশা করি, আদালত যাচাই-বাছাই শেষে সত্য উদঘাটন করবে এবং স্বপন খানকে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। এই বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া গেলে আমরা আপনাকে অবগত করব।