জাজিরা: শরিয়তপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের শরিয়তপুর জেলার অন্তর্গত জাজিরা উপজেলা একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ২৪৬.২১ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২৩°১৫´ থেকে ২৩°২৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১৩´ থেকে ৯০°২৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী, দক্ষিণে শরিয়তপুর সদর ও নড়িয়া, পূর্বে নড়িয়া এবং পশ্চিমে শিবচর ও মাদারীপুর সদর উপজেলার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত জাজিরা।
জনসংখ্যা ও ভূগোল: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জাজিরার জনসংখ্যা ১৯৪০১৯; যার মধ্যে পুরুষ ৯৬০৪১ এবং মহিলা ৯৭৯৭৮। ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলিম (১৯১৫৯৭), হিন্দু (২৪০৭), খ্রিস্টান (১৪) এবং অন্যান্য (১)। এই উপজেলার প্রধান নদী পদ্মা।
প্রশাসন ও ইতিহাস: ১৯৭৩ সালে থানা হিসেবে গঠিত হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে জাজিরা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় রাজাকাররা দক্ষিণ নমকান্দি গ্রাম পুড়িয়ে দেয় এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। মুক্তিযুদ্ধে উপজেলার অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, যাদের স্মরণে ১টি স্মৃতিসৌধ এবং ৬টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন: জাজিরার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। কৃষিজমির মালিকানা ৭৪.৪০% ভূমিমালিক এবং ২৫.৬০% ভূমিহীন। ধান, পাট, গম, সরিষা, পিঁয়াজ, রসুন, কালিজিরা, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। আম, জাম, কাঠাল, কলা, বেল প্রধান ফল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। উপজেলায় বিভিন্ন কুটির শিল্প, যেমন স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ বিদ্যমান। ৮৫ কিমি পাকা রাস্তা, ২ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ৩৭২ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। নৌপথ ২৯ কিমি।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: শিক্ষার হার ৪৪.৪% (পুরুষ ৪৫.৫%, মহিলা ৪৩.৩%)। ৪টি কলেজ, ১টি কারিগরি কলেজ, ১টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬টি কমিউনিটি বিদ্যালয়, ১২টি কিন্ডার গার্টেন ও ১১টি মাদ্রাসা রয়েছে। জাজিরা ডিগ্রি কলেজ, জাজিরা মোহর আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য সেবার জন্য রয়েছে ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩টি স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, ১২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৩টি প্রাইভেট ক্লিনিক, ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ১টি পশু চিকিৎসা কেন্দ্র।
জাজিরা উপজেলা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হলেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।