সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ (১৯৩২-২০০৩): একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, বিচারক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ। তিনি ১৯৩২ সালের ১৮ জানুয়ারি অবিভক্ত ভারতের যুক্ত প্রদেশের গাজীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সৈয়দ জাফর আহমেদ ছিলেন দিনাজপুরের (পশ্চিমবঙ্গ) হিলির জমিদার ও ব্যবসায়ী। হিলির রামনাথ ইংরেজি হাইস্কুল এবং কলকাতা মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর পরিবার পূর্ব বাংলায় চলে আসে। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে আই.এ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ও এম.এ পাশ করেন। লন্ডনের লিংকনস ইন থেকে বার-এট-ল এবং লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস্ থেকে অর্থনীতিতে এম.এসসি ডিগ্রী লাভ করেন। ইংল্যান্ডে শিক্ষকতা করার পর ১৯৬০ সাল থেকে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
ছাত্রজীবনে মুকুল ফৌজ ও ব্রতচারী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৬ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অফিসারদের শাস্তির প্রতিবাদে কলকাতায় বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য গ্রেফতার হন। ভাষা আন্দোলন ও পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরোধিতায় কারারুদ্ধ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শাস্ত্রের খন্ডকালীন অধ্যাপক ও আইন উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭২ সালে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এবং ১৯৭৬ সালে এটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন। দুইবার সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বার কাউন্সিলের অর্থনৈতিক কমিটির সদস্য ছিলেন। কোম্পানি আইন সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯১৩ সালের কোম্পানি আইনে তাৎপর্যপূর্ণ সংশোধনীর প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ও চেয়ারম্যান ছিলেন।
বহু আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। সিভিল আইনের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপ্রীম কোর্টে ‘এমিকাস কুরী’ নামে পরিচিত ছিলেন। ‘আনোয়ার হোসেন বনাম রাষ্ট্র’ (৮ম সংশোধনী) মামলায় বিশেষ অবদান রাখেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন করেন। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অংশ নেন। ১৯৯১ সালে নির্বাচিত সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দুইবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আইন পেশার পাশাপাশি ঢাকা নর্থ রোটারী ক্লাবের সভাপতি, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের আজীবন সদস্য এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০৩ সালের ১২ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।