সেন্ট মার্টিন দ্বীপ: বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ
বাংলাদেশের সর্ব-দক্ষিণে, বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত সেন্ট মার্টিন দ্বীপ একটি ছোট্ট প্রবাল দ্বীপ। মাত্র ৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার অন্তর্গত। টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমারের উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।
নামকরণ ও ইতিহাস:
দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়ভাবে নারিকেল জিঞ্জিরা, জিঞ্জিরা, জাজিরা, দারুচিনি দ্বীপ, দেরদিউসা দ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। প্রচুর নারিকেল গাছ থাকায় নারিকেল জিঞ্জিরা নামটি প্রচলিত ছিল। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভূ-জরিপ দল দ্বীপটিকে ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নামানুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় সেন্ট মার্টিন। তবে একটি সাধুর নামেও এর নামকরণের গল্প প্রচলিত আছে।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
দ্বীপটি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা এবং প্রস্থে ৭০০ মিটার থেকে ২০০ মিটার। তিন দিকে জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে। দ্বীপটি উত্তর (নারিকেল জিঞ্জিরা), দক্ষিণ (দক্ষিণ পাড়া) এবং একটি সঙ্কীর্ণ লেজের মতো অংশ (গলাচিপা) তিনটি অংশে বিভক্ত। ছেঁড়াদিয়া নামে একটি জনশূন্য দ্বীপও দ্বীপটির দক্ষিণে অবস্থিত, ভাটার সময় হেঁটে যাওয়া যায়।
জীববৈচিত্র্য:
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে পেজালা নামে পরিচিত বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, বিশেষ করে লাল অ্যালগি, প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ার জন্যও দ্বীপটি পরিচিত।
অর্থনীতি:
দ্বীপবাসীদের প্রধান পেশা মাছ ধরা। পর্যটনও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উৎস। মাছ, নারিকেল, পেজালা এবং ঝিনুক ব্যবসাও করে থাকে অনেকে। ছোট ছোট শিশুরা দ্বীপ থেকে সংগৃহীত শৈবাল পর্যটকদের কাছে বিক্রি করে থাকে।
পর্যটন:
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটন মৌসুম। প্রতিদিন ৫-৭টি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড হতে আসা যাওয়া করে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল এবং একটি সরকারি ডাকবাংলো রয়েছে।
সংরক্ষিত এলাকা:
০৪ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে পরিবেশ মন্ত্রণালয় বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী সেন্টমার্টিন দ্বীপ সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১,৭৪৩ বর্গ কি.মি. এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে।