সুলতানা কামাল: একজন অসাধারণ নারী নেতা ও মানবাধিকার কর্মী
সুলতানা কামাল বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি তার অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারের জন্য সুপরিচিত। তার জীবন অভিজ্ঞতা, কর্মজীবন এবং সমাজে অবদানের কথা তুলে ধরা হলো এই লেখায়।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণকারী সুলতানা কামালের পিতা কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং মাতা ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি সুফিয়া কামাল। তিনি লীলা নাগের নারীশিক্ষা মন্দিরে ভর্তি হন এবং ঢাকার আজিমপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে এলএলবি ডিগ্রিও লাভ করেন। নেদারল্যান্ডস থেকে তিনি ওমেন এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সুলতানা কামাল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশ হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তার অদম্য সাহস ও নিষ্ঠার জন্য তিনি সমাদৃত।
কর্মজীবন:
সুলতানা কামালের কর্মজীবন সঙ্গীত কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হয়। পরে তিনি বাংলাদেশ টোব্যাকো কোম্পানিতে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি সিলেটের খাদিমনগরে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি হংকংয়ে ভিয়েতনামী শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের আইনি পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ২০১৬ সাল পর্যন্ত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (ASK) নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।
মানবাধিকার কর্মকাণ্ড:
সুলতানা কামাল দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকারের জন্য কাজ করে আসছেন। তিনি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন, যার মধ্যে কানাডিয়ান মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ কর্তৃক প্রদত্ত জন হামফ্রে ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড অন্যতম।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ভূমিকা:
২০০৬-২০০৮ সালের রাজনৈতিক সংকটের সময় তিনি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সাথে মতবিরোধের কারণে তিনি পদত্যাগ করেন।
অন্যান্য অবদান:
সুলতানা কামাল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি নিয়মিতভাবে দৈনিক পত্রিকা ও অন্যান্য প্রকাশনায় সামাজিক, আইনগত এবং লিঙ্গ-সংক্রান্ত বিষয়ে লেখালেখি করেন।
উপসংহার:
সুলতানা কামালের জীবন অসাধারণ প্রচেষ্টা, সাহস এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বাংলাদেশের নারীদের জন্য একজন অনুপ্রেরণার উৎস এবং তার কাজ মানবতার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
সুলতানা কামাল: একজন অসাধারণ নারী নেতা ও মানবাধিকার কর্মী