কামাল উদ্দিন আহমেদ (১৯২১-২০০৪) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো ছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা। চট্টগ্রামের গহীরায় ২১ ডিসেম্বর ১৯২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে বি.এস.সি এবং এম.এস.সি ডিগ্রি অর্জনের পর, ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়নে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণরসায়ন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তার উদ্যোগে ১৯৬৭ সালে ফার্মাসি বিভাগ এবং পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট চালু হয়। ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর, সাভারে বাংলাদেশ ভেষজ ঔষুধ ইনস্টিটিউট এবং পুষ্টি ও সামাজিক উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণচিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেন এবং এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির প্রতিষ্ঠায় কামাল উদ্দিন আহমেদের অবদান অসামান্য। তিনি একাডেমির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। বিশেষ করে, ১৯৬২-৬৪ সালে ভিটামিন 'এ' অভাবজনিত অন্ধত্ব রোধে শক্তিশালী ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল বিতরণ পরিকল্পনা তৈরি এবং আয়োডিনের অভাব দূর করার জন্য আয়োডিনযুক্ত লবণের প্রবর্তন তার উল্লেখযোগ্য অবদান। খেসারি ডালের বিষাক্ততা, মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেটের প্রভাব, সরিষার তেলের গুণাগুণ, ভিটামিন 'এ', লৌহ এবং আয়োডিনের অভাব, এবং আর্সেনিকোসিসের উপর তার গবেষণা দুইশতাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ৪ জুলাই ২০০৪ সালে ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। তার অবদান বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।