সিরাজ নামটি একাধিক ব্যক্তি ও ঘটনার সাথে জড়িত। এই নিবন্ধে আমরা দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবো যাদের নাম সিরাজ ছিল।
- *১. সিরাজ শিকদার (১৯৪৪-১৯৭৫):** একজন বিপ্লবী রাজনীতিক, সিরাজ শিকদারের জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জে। তিনি বরিশাল জেলা স্কুল, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ এবং ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়, তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগদান করেন এবং ১৯৬৭ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন এবং পরে মাও-সে-তুং গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে সরকার বন্ধ করে দেয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সিরাজ শিকদার গ্রামাঞ্চলে সর্বহারা রাজনীতি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেন এবং বরিশাল জেলার স্বরূপকাঠিতে 'পূর্ববাংলার সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনী' গঠন করেন। ৩ জুন, ১৯৭১ সালে তিনি স্বরূপকাঠির পেয়ারাবাগে 'পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি' গঠন করেন। স্বাধীনতার পর, তিনি এই দলের সভাপতি হন এবং 'পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তিফ্রণ্ট'-এর সভাপতিও নির্বাচিত হন। সর্বহারা রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের হালি শহর থেকে গ্রেফতারের পর ঢাকায় আসার পথে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
- *২. শাহাজান সিরাজ (১৯৪৩-২০২০):** একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, এবং জাতীয় সংসদের ৫ বার নির্বাচিত এমপি। ১৯৪৩ সালের ১লা মার্চ টাঙ্গাইল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শরীফ ও হামুদুর রহমান কমিশনবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন। ১৯৭১ সালে ঢাকার পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধে 'মুজিব বাহিনী'-র সহ-আঞ্চলিক প্রধান ছিলেন। জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি বিএনপি সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। ২০২০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।