মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলা: একটি বিস্তারিত বিবরণ
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ জেলায় অবস্থিত সিঙ্গাইর উপজেলা, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। ২১৭.৫৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২৩°৪২´ থেকে ২৩°৫২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৩´ থেকে ৯০°১৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে ধামরাই ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা, দক্ষিণে নবাবগঞ্জ (ঢাকা) উপজেলা, পূর্বে সাভার ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সীমানা সিঙ্গাইরকে ঘিরে রেখেছে।
জনসংখ্যা ও গঠন:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সিঙ্গাইর উপজেলার জনসংখ্যা ২৮৭,৪৫১ জন; এর মধ্যে পুরুষ ১৪০,৮৩৪ জন এবং মহিলা ১৪৬,৬১৭ জন। ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুসলিম ২৭০,০২৮ জন, হিন্দু ১৭,৩৮০ জন, খ্রিস্টান ৩৫ জন এবং অন্যান্য ৮ জন।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
সিঙ্গাইরের প্রধান নদী হলো ধলেশ্বরী, গাজীখালী ও কালীগঙ্গা। এই নদীগুলো উপজেলার ভৌগোলিক গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ দেখা যায়, যেমন: ফোর্ড নগরের দুর্গ, বয়রা নীলকুঠি, দত্ত-গুপ্তদের বাসভবন, আনন্দকুঠি ও মন্দির (বলধারা), সেনবাড়ি ও দুর্গামন্ডপ (বলধারা), ইমামপাড়া জামে মসজিদ (বলধারা, পারিল), ইব্রাহীম শাহের মাযার (বলধারা, পারিল), কালীসুন্দরী দাতব্য চিকিৎসালয় (১৮৯৫)।
প্রশাসনিক ইতিহাস:
১৯১৯ সালে সিঙ্গাইর থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সিঙ্গাইর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২৮ অক্টোবর, তিন শতাধিক পাকিস্তানি সেনা সিঙ্গাইর ক্যাম্প থেকে নৌকাযোগে গোলাইডাঙা হাইস্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমণের জন্য অগ্রসর হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ এবং যুদ্ধ ঘটে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান:
উপজেলায় ৪২০ টি মসজিদ, ৩৫ টি মন্দির, ১০ টি মাযার এবং ১ টি তীর্থস্থান রয়েছে।
শিক্ষা:
শিক্ষার দিক থেকে সিঙ্গাইরের অবস্থা মোটামুটি ভালো। উপজেলায় ২ টি কলেজ, ২২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৬ টি মাদ্রাসা রয়েছে।
অর্থনীতি:
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি (৫৬.৮৪%), অকৃষি শ্রমিক (২.৫৫%), শিল্প (০.৯৮%), ব্যবসা (১৪.১৫%), পরিবহণ ও যোগাযোগ (২.১৭%), চাকরি (৮.৩৯%), নির্মাণ (০.৯৬%), ধর্মীয় সেবা (০.১৯%), রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স (৫.২০%) এবং অন্যান্য (৮.৫৭%)।
কৃষি:
সিঙ্গাইরের প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আখ, আলু, ডাল, তৈলবীজ এবং শাকসবজি। কিছু বিলুপ্তপ্রায় ফসল ও উপজেলায় চাষাবাদ করা হয়।
যোগাযোগ:
উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। পাকা রাস্তা ১৩৫ কিমি, আধা-পাকা রাস্তা ৮ কিমি এবং কাঁচা রাস্তা ৪১২ কিমি। নৌপথ ৪৫ কিমি।
স্বাস্থ্য:
স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে উপজেলায় ১ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১ টি মাতৃমঙ্গল ও শিশুসদন, ১ টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ১১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১০ টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ১ টি ক্লিনিক রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে সিঙ্গাইর উপজেলার বহু লোক প্রাণ হারায়।
এনজিও:
ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, আইটিসিএল সহ বিভিন্ন এনজিও সিঙ্গাইর উপজেলায় কাজ করে।
উপসংহার:
সিঙ্গাইর উপজেলা ঐতিহাসিক ঘটনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং অর্থনৈতিক গতিবিধির দিক থেকে সমৃদ্ধ। এই উপজেলার আরও বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আমরা আপনাদের সাথে আবার যোগাযোগ করব।