সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা: একটি ভয়াবহ অধ্যায়

ভাষাভাষী বাংলার ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এক অন্ধকার অধ্যায়। ধর্মীয় অন্ধত্ব ও রাজনৈতিক উস্কানি দ্বারা প্ররোচিত এই দাঙ্গাগুলি অসংখ্য মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং সমাজে গভীরভাবে ক্ষত সৃষ্টি করেছে। ১৯৪৬ সালের কলকাতা দাঙ্গা এবং ১৯৪১ সালের ঢাকা দাঙ্গা এই দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যা বাংলার সাম্প্রদায়িক অশান্তির ভয়াবহতার প্রতিফলন করে।

  • *১৯৪৬ সালের কলকাতা দাঙ্গা:** ১৬ আগস্ট, ১৯৪৬ সালে কলকাতায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবিকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্ব এ দাঙ্গার প্রধান কারণ ছিল। লীগের ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালনের ঘোষণা এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পাকিস্তান-বিরোধী প্রচারণা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে। উত্তর কলকাতা থেকে শুরু হওয়া দাঙ্গা দ্রুত গোটা শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বউবাজার, আপার সার্কুলার রোড, বিবেকানন্দ রোড ও স্ট্র্যান্ড রোডের আশেপাশে দাঙ্গার তীব্রতা ছিল সবচেয়ে বেশি। সরকারি হিসেবে ৪০০০ জন নিহত এবং ১০০,০০০ জন আহত হয়। এই দাঙ্গায় সরকারের, বিশেষ করে পুলিশের ব্যর্থতা লক্ষণীয়। মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর ভূমিকাও সমালোচনার সম্মুখীন হয়। দাঙ্গার পর কলকাতা সম্পূর্ণরূপে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে, খাদ্য সংকট দেখা দেয় এবং মহামারীর আশঙ্কা দেখা দেয়।
  • *১৯৪১ সালের ঢাকা দাঙ্গা:** ১৪ মার্চ, ১৯৪১ সালে ঢাকায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। একটি ছোটোখাটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। চকবাজার, মৌলভী বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক, ঠাটারি বাজার, র‌্যাংকিন স্ট্রিট, রহিমাবাদ আক্রান্ত হয়। এই দাঙ্গা গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, রায়পুরা, শিবপুর ও নরসিংদীতেও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। পুলিশের ব্যর্থতার কারণে দাঙ্গা দীর্ঘায়িত হয়।
  • *উভয় দাঙ্গার বৈশিষ্ট্য:** উভয় দাঙ্গাই ছিল সুপরিকল্পিত এবং সুসংগঠিত। দুই পক্ষেরই সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজনের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। দাঙ্গায় নারীরাও নির্যাতিত হয়। দাঙ্গার পর সমাজে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়।
  • *পরিণতি:** এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলি বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে গভীর প্রভাব ফেলে। এটি পাকিস্তান আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে এবং ভারতের বিভাজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৪৬ সালের কলকাতা দাঙ্গায় হাজার হাজার মানুষ নিহত ও আহত হয়।

১৯৪১ সালের ঢাকা দাঙ্গা ঢাকা শহর ও আশেপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল।

দুটি দাঙ্গাই ছিল সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত।

উভয় দাঙ্গার ফলে বাংলার সমাজ ও রাজনীতিতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়।

পুলিশের ব্যর্থতা দাঙ্গার দীর্ঘায়ন ঘটায়।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৪৬ সালের কলকাতা দাঙ্গায় ৪০০০ জন নিহত ও ১০০,০০০ আহত হয়
  • ১৯৪১ সালের ঢাকা দাঙ্গা শহর ও গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে
  • উভয় দাঙ্গাই ছিল সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত
  • নারী ও মধ্যবিত্তরাও দাঙ্গায় অংশ নেয়
  • দাঙ্গার ফলে সমাজে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়