অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা: একটি জাতীয়তাবাদী সংগঠনের উত্থান ও পতন
১৯১৫ সালে হরিদ্বারের কুম্ভমেলায় পণ্ডিত মদনমোহন মালব্যের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা ছিল একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন। উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানীয় হিন্দু আন্দোলনকে একত্রিত করার লক্ষ্য নিয়ে এই সংগঠন গঠিত হয়। মূলত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের বিরোধী ধারা হিসেবে মহাসভা গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তি, যেমন স্বামী শারদানন্দ, লালা লাজপত রায়, বিজয় রাঘবাচার্য, বিনায়ক দামোদর সাভারকর, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং অন্যান্যরা সংগঠনটির নেতৃত্বে ছিলেন।
১৯২০-এর দশকে মহাসভা কংগ্রেসের আদলে গঠন করে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শাখা প্রতিষ্ঠা করে। হিন্দু ও অস্পৃশ্যদের মধ্যে সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি, গোরক্ষা এবং হিন্দি ভাষার প্রসারে জোর দিয়েছিল মহাসভা। তবে কংগ্রেসের রাজনৈতিক কৌশলের বিরোধিতা এবং হিন্দু স্বার্থ রক্ষার দাবীতে মহাসভা ক্রমশ কট্টরপন্থী ধারার দিকে প্রবাহিত হয়।
মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করে মহাসভা। চৌরিচৌরা কাণ্ডের পর গান্ধী আন্দোলন প্রত্যাহার করলে ১৯২৩ সালে মহাসভা বিরাট হিন্দু পুনরুত্থান অভিযান শুরু করে। 'শুদ্ধি' কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং ‘হিন্দু আত্মরক্ষা বাহিনী’ গঠনের ডাক দেয়। ১৯২০-এর দশকে অস্পৃশ্যতার বিরোধিতা এবং ‘অপবিত্র’দের শুদ্ধিকরণে মহাসভার কর্মকাণ্ড কেন্দ্রীভূত ছিল। আদমশুমারিতে আদিবাসীদেরকে বর্ণহিন্দু হিসাবে নিবন্ধন করার প্রচেষ্টা মহাসভা চালিয়েছিল।
১৯২৫ সালে কেশব বল্লভ হেডগেওয়ার নেতৃত্বে একদল মহাসভা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৩০-এর দশকে ধর্মান্তরিত নিম্নবর্ণের মানুষদের হিন্দু সম্প্রদায়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা মুসলমানদের সাথে সংঘর্ষের সৃষ্টি করে। এই সংঘর্ষ প্রায়শই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নিত।
১৯৪০-এর দশকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, মুসলিম লীগ এবং হিন্দু মহাসভার মধ্যে রাজনৈতিক মতানৈক্য চরমে ওঠে। ১৯৪৬ সালের কলকাতা দাঙ্গা মহাসভার রাজনৈতিক আশাকে কিছুটা পুনরুজ্জীবিত করে। ভারতের স্বাধীনতা ও গান্ধী হত্যার পর মহাসভার অনেক সদস্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতীয় জনসংঘে যোগদান করে।
সাভারকরের জনপ্রিয়তার কারণে RSS এবং মহাসভার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বর্তমানে মহাসভা একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিদ্যমান থাকলেও তাদের উল্লেখযোগ্য ভোট নেই।