সর্দি-কাশি: একটি সাধারণ অথচ বিরক্তিকর সমস্যা
সর্দি-কাশি, বা ঠাণ্ডা লাগা, একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা ঊর্ধ্ব শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এই সাধারণ রোগটি বিশ্বব্যাপী মানুষকে প্রভাবিত করে এবং বছরের পর বছর ধরে মানবজাতির সাথে যুক্ত। প্রাচীন মিশরীয় ইবারস প্যাপিরাসেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়, যা ১৬ শতক খ্রিস্টপূর্বের আগে লেখা হয়েছিল। যদিও এর প্রকৃত কারণ ১৯৫০-এর দশকে আবিষ্কৃত হয়, তবুও ঋতুভেদে এর প্রকোপের রহস্য এখনো সম্পূর্ণভাবে উন্মোচিত হয়নি।
লক্ষণসমূহ:
সর্দি-কাশির লক্ষণগুলি কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- কাশি (প্রায় ৫০% ক্ষেত্রে)
- সর্দি (নাক দিয়ে পানি পড়া)
- হাঁচি
- গলা ব্যথা (প্রায় ৪০% ক্ষেত্রে)
- মাথাব্যথা
- পেশি ব্যথা (প্রায় ৫০% ক্ষেত্রে)
- জ্বর (শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়)
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণত জ্বর দেখা যায় না। কাশি সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জার তুলনায় হালকা হয়। অনেক সময় সর্দি-কাশির সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণের মিল থাকে, তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা অনেক বেশি তীব্র।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
সর্দি-কাশির কোনও টিকা নেই। তবে নিম্নলিখিত উপায়গুলি অবলম্বন করে এর প্রকোপ কমানো যায়:
- নিয়মিত হাত ধোয়া
- আধোয়া হাতে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ না করা
- অসুস্থ ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ এড়িয়ে চলা
- রোগ প্রতিরোধক মুখোশ ব্যবহার
সর্দি-কাশির কোনো নিরাময় নেই। তবে লক্ষণগুলির তীব্রতা কমাতে কিছু ঔষধ ব্যবহার করা যায়, যেমন:
- জিন্ক (সর্দির লক্ষণ শুরুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেবন করলে কার্যকরী)
- স্টেরয়েডহীন প্রদাহনিরোধী ঔষধ (NSAIDs) যেমন আইবুপ্রোফেন (ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে)
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এটি ভাইরাল সংক্রমণ। কফের ঔষধের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
প্রকোপ:
সর্দি-কাশি সবচেয়ে ঘন ঘন সংঘটিত সংক্রামক রোগ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক বছরে দুই থেকে তিন বার, আর শিশুরা ছয় থেকে আটবার আক্রান্ত হতে পারে। শীতকালে এর প্রকোপ বেশি থাকে।
অন্যান্য তথ্য:
যুক্তরাজ্যের মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল ১৯৪৬ সালে Common Cold Unit (CCU) প্রতিষ্ঠা করেছিল। এখানেই ১৯৫৬ সালে রাইনোভাইরাস আবিষ্কৃত হয়।
সর্দি-কাশি মানবদেহের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতিও করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে এর জন্য ৭.৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়।
উপসংহার:
সর্দি-কাশি একটি সাধারণ এবং অপরিহার্য ভাইরাল সংক্রমণ। প্রতিরোধ এবং লক্ষণ উপশমের মাধ্যমে এর প্রভাব কমানো সম্ভব।