সনৎ দত্ত

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

সনৎ দত্ত: উত্তর-পূর্বের এক অমর বিপ্লবী

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অনেক অজানা নায়কের কথা আমরা জানি না। তাদের অনেকের নামই ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়নি। সনৎ দত্ত তেমনই একজন অজানা নায়ক, যিনি সুরমা উপত্যকার স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী, চিন্তাশীল এবং সাহসী বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অসামান্য সংগ্রাম করেছিলেন।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:

সনৎ কুমার দত্তগুপ্ত, যিনি সনৎ দত্ত নামে পরিচিত ছিলেন, তার পিতৃপুরুষরা ছিলেন কুমিল্লার বাসিন্দা। তাঁর বাবা ত্রিপুরার একজন পুলিশ সুপার ছিলেন। বাল্যকাল থেকেই মেধাবী ছাত্র সনৎ ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম দশজনের মধ্যে ছিলেন। যুগান্তর দলের বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ ধর তাঁর গৃহশিক্ষক ছিলেন এবং তিনিই সনৎকে বিপ্লবের পথে পরিচালিত করেন। উপেন্দ্রনাথ দেওঘর ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ হওয়ার পর সনৎ যুগান্তর দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

বিপ্লবী কর্মকাণ্ড:

সনৎ দত্ত ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা। তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন বিপ্লবী সংগঠনকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনসুকিয়াকে তিনি উত্তর-পূর্বের বিপ্লবী কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে নির্বাচন করেন। জোসেফ ম্যাৎসিনির মত, তিনি বিদেশি সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। তিব্বত, চীন, থাইল্যান্ড থেকে অস্ত্র সাহায্য নেওয়ার পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন। উপজাতিদের সমর্থন অর্জনের জন্য আরব, মিশমি, খামতি, এবং তিব্বতীদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করেন। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্টের মধ্যেও বিদ্রোহের চেষ্টা করেন।

বার্মার সীমান্তে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নেফা কাণ্ডে চীনের সীমান্ত শহর রীমায় অবস্থান করেন। সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ১৯৩৪ সালের ১০ই জুলাই তিনসুকিয়া মেল ডাকাতি। এই ডাকাতির পেছনে ছিলেন উমাশংকর পাটোয়া, বিপুলানন্দ কর, রমাকান্ত দাস, শচীন্দ্রনাথ দাস এবং সনৎ দত্তের বড় ভাই অজিত দত্ত।

গ্রেপ্তার ও পরবর্তী জীবন:

চাঁদপুর মেল ডাকাতির ঘটনায় সনৎ দত্তের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মতিলাল জায়গীরদার গ্রেপ্তার হন এবং ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচার ও ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। সনৎও গ্রেপ্তার হন। তবে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ভারতে ফিরে আসেন কিন্তু রাজনীতি থেকে সরে আসেন। ১৯৫৬ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।

সনৎ দত্ত এবং ইতিহাস:

স্বাধীনোত্তর ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইতিহাস অনেকটাই অবহেলিত ছিল। সনৎ দত্তের মতো বিপ্লবীদের ভূমিকা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। তবে তাঁর সাহস, দূরদর্শিতা এবং উত্তর-পূর্বের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর অবদান স্মরণীয়।

disambiguesTitle

মূল তথ্যাবলী:

  • সনৎ দত্ত ছিলেন সুরমা উপত্যকার একজন বিশিষ্ট বিপ্লবী।
  • তিনি উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন বিপ্লবী সংগঠনকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছিলেন।
  • তিব্বত, চীন, থাইল্যান্ড থেকে অস্ত্র সাহায্য নেওয়ার পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন।
  • তিনসুকিয়া মেল ডাকাতি ছিল তার উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড।
  • ১৯৫৬ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - সনৎ দত্ত

সনৎ দত্ত রানার অটোমোবাইলসের এজিএমে উপস্থিত ছিলেন।