সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার

আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:২০ পিএম

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার: বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ

সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থানের বাজার ছিল। তবে, ২০০৮ সালের পর থেকে দেশটির শ্রমবাজারে নানা উত্থান-পতন দেখা গেছে। ২০১২ সালে হঠাৎ করেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ বন্ধ করে দেয় আমিরাত। এর পর থেকেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা অব্যাহত ছিল।

২০১৫ সালে ঢাকায় একটি ভিসা ও কনসুলার অফিস খোলার পর আশা দেখা দিলেও, প্রকৃত অর্থে শ্রমবাজার খোলা হয়নি। ২০১৯ সালে দুবাই এয়ার শোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও UAE-র শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের বৈঠকে শ্রমবাজার পুনরায় খোলার আশ্বাস পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে শ্রমবাজার পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়নি।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে আমিরাতে ভিজিট ভিসা চালু এবং ওয়ার্ক ভিসা চালুর ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশটি সাময়িক ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জেল-জরিমানার শিকার বাংলাদেশি প্রবাসীরা মুক্তি পেলেও, সাধারণ ক্ষমা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও, সব ধরনের ভিসা ইস্যু এখনও বন্ধ রয়েছে।

আমিরাত সরকার ১লা জুলাই থেকে ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। এতে অনিয়মিত বা অবৈধভাবে অবস্থানরত কর্মীরা নতুন কাজে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। এর ফলে ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি উপকৃত হয়েছে বলে জানা গেছে।

শ্রমবাজারে নতুন উদ্যোগের আশা করছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৩ সালে UAE-এ কর্মী প্রেরণ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। তবে এই সমঝোতা স্মারকের বাস্তবায়ন মন্থরগতিতে এগিয়ে চলেছে। সমঝোতা স্মারকের পর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৪০৪ জন বাংলাদেশি কর্মী আমিরাতে গেছে, যা ২০০৮ সালে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ জন কর্মী গেছে তার তুলনায় নগন্য।

একই সাথে দেশটিতে দক্ষ জনবলের চাহিদা বাড়ছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি প্রফেশনালদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা কম। অন্যদিকে অদক্ষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে চাহিদা কম এবং প্রতিযোগিতা বেশি। বাংলাদেশকে দক্ষ জনশক্তি উৎপাদনে জোর দিতে হবে। বিভিন্ন পেশায় দক্ষ জনবল তৈরি এবং ইউরোপের মতো নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমিরাতে যাওয়া শ্রমিকদের সংখ্যা কম। এটা উদ্বেগের বিষয়। এই শ্রমবাজারকে সক্রিয় রাখার জন্য দুদেশের মধ্যে আরো কার্যকর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

শেষকথা:

আমিরাতের শ্রমবাজার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বাজারের উন্মুক্ত থাকা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ জনশক্তি উৎপাদন এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার সক্রিয় রাখা জরুরি।

মূল তথ্যাবলী:

  • ২০১২ সালে আমিরাত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ বন্ধ করে দেয়।
  • ২০১৫ সালে ঢাকায় ভিসা ও কনসুলার অফিস খোলা হয়।
  • ২০১৯ সালে শ্রমবাজার পুনরায় খোলার আশ্বাস পাওয়া যায়।
  • ২০২৪ সালে ভিজিট ভিসা চালু হয় এবং ওয়ার্ক ভিসা চালুর ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
  • জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সাময়িক ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
  • সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও সব ধরনের ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকে।
  • দক্ষ জনশক্তি উৎপাদন ও নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান গুরুত্বপূর্ণ।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে।