শিক্ষক: জাতির গুরু, দেশের নির্মাতা
শিক্ষক, শব্দটি শুধুমাত্র একটি পেশা নয়; এটি একটি মহান দায়িত্ব, একটি পবিত্র ব্রত। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিই শিক্ষক। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক—পদবী যাই হোক না কেন, তাদের ভূমিকা অপরিসীম। তারা জাতির গড়ে তোলার কারিগর, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিকনির্দেশক। একজন আদর্শ শিক্ষক জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন। শুধু পাঠদানই নয়, মানবিক মূল্যবোধের বীজ বপন করে, তাদের চরিত্র গঠনে ভূমিকা পালন করেন।
শিক্ষকের ভূমিকা কালের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। পূর্বে গুরুকুল পদ্ধতিতে গুরু-শিষ্যের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল; বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, নতুন শিক্ষা পদ্ধতির প্রয়োগ শিক্ষকদের ক্ষমতা ও দায়িত্বকে আরও বৃদ্ধি করেছে। আনুষ্ঠানিক পাঠদান ছাড়াও, তারা মাঠভ্রমণ, স্টাডি হল তত্ত্বাবধান, স্কুলের বিভিন্ন কর্মসূচী পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের আইনি দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষার্থীদের হয়রানি, লিঙ্গবৈষম্য, বর্ণবাদ এবং অপব্যবহার থেকে রক্ষা করার।
শিক্ষকতার পেশাটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। পেশাগত চাপ, দীর্ঘ কর্মঘন্টা, কম বেতন, শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক—এইসব বিষয় শিক্ষকদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। যুক্তরাজ্যের ২০০০ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪২% শিক্ষক পেশাগত চাপের শিকার। এই চাপ প্রশমিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে—যেমন, শিক্ষকদের সময়সূচী পরিবর্তন, সহায়তা নেটওয়ার্ক সৃষ্টি, কাউন্সেলিং ইত্যাদি। ভারতের CENTA (Centre for Teacher Accreditation) এর মতো সংগঠন শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি—এইসব বিষয় একটি সুস্থ শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য। শিক্ষকদের কল্যাণ এক দেশের উন্নয়নের সাথে জড়িত। কারণ, শিক্ষকরাই জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলেন।