শালিখা: মাগুরা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের মাগুরা জেলায় অবস্থিত শালিখা উপজেলা, এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, এবং বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য পরিচিত। ২২৮.৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি ২৩°১৫´ থেকে ২৩°২৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৫´ থেকে ৮৯°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে ঝিনাইদহ সদর ও মাগুরা সদর উপজেলা, দক্ষিণে বাঘারপাড়া ও নড়াইল সদর, পূর্বে নড়াইল সদর, মাগুরা সদর, লোহাগড়া ও মোহাম্মদপুর, এবং পশ্চিমে কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ও বাঘারপাড়া উপজেলায় আবদ্ধ।
জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, শালিখার মোট জনসংখ্যা ১৬৩,৬৫৮; এর মধ্যে পুরুষ ৮১,৫৩৬ এবং মহিলা ৮২,১২২। ধর্মীয়ভাবে, ১১৯,৭৫৮ জন মুসলিম, ৪৩,৮৮১ জন হিন্দু এবং ১৯ জন খ্রিস্টান। চিত্রা, নবগঙ্গা ও ফাটকি নদী এবং জামলা, নেউরা ও বুড়ুলির বিল উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
শালিখার নামকরণ নিয়ে বেশ কিছু লোকমুখী কাহিনী প্রচলিত আছে। কিছু জনশ্রুতি অনুসারে, একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে শালি ধান উৎপাদিত হতো, যা থেকে 'শালিখা' নামের উৎপত্তি হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত তথ্য নেই। ১৯২৪ সালে শালিখা থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় শালিখা ৮ নং সেক্টরের আওতাভুক্ত ছিল এবং ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধে এ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অপরিসীম। ছয়ঘরিয়া মসজিদ, গোপালগ্রাম জামে মসজিদ (সপ্তদশ শতাব্দী), এবং তালখড়ি লোকনাথ আশ্রম (বৈষ্ণব যুগ) উপজেলার উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
অর্থনৈতিক কার্যক্রম:
শালিখার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, ডাল, তেলবীজ, আখ, গম, এবং বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লিচু, খেজুর, জামরুল, জাম্বুরা ইত্যাদি ফলও উৎপাদিত হয়। মৎস্য, গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির খামারও এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
শালিখার সাক্ষরতার হার ৪৯%, যেখানে পুরুষ ৫১.৮% এবং মহিলা ৪৬.২%। উপজেলায় ৩টি কলেজ, ২৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি কমিউনিটি স্কুল, ৫টি স্যাটেলাইট স্কুল এবং ১৬টি মাদ্রাসা রয়েছে। সংস্কৃতির দিক থেকে, ১১টি লাইব্রেরি, ১টি সিনেমা হল, ১টি মহিলা সংগঠন, ২টি নাট্যদল, ১টি যাত্রাপার্টি, ২৫টি ক্লাব, এবং ২০টি খেলার মাঠ রয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
শালিখার যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়কপথের উপর নির্ভরশীল। ১২০ কিমি পাকা রাস্তা, ২০ কিমি আধা-পাকা রাস্তা, এবং ৪০০ কিমি কাঁচা রাস্তার ছাড়াও ১২৭ কিমি নৌপথ রয়েছে।
প্রশাসন:
শালিখার প্রশাসনিক কাজ আড়পাড়া থেকে পরিচালিত হয়।