শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে, ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, আইনজীবী, শিল্পী, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক, সমাজসেবী প্রভৃতি মৃত্যুবরণ করেন। এদের কিছুসংখ্যকের মৃতদেহ ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন গণকবরে পাওয়া যায়। এই ঘটনার স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়।
হত্যাকাণ্ডের পেছনে লক্ষ্য ছিল স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করা। হত্যার পূর্বে অনেক বুদ্ধিজীবীকে নির্যাতন করা হয়েছিল। নিহত বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। বাংলা একাডেমির 'শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ' ২৩২ জনের কথা উল্লেখ করেছে, অন্যদিকে কিছু প্রতিবেদন ১০০০ এর বেশি নিহতের কথা বলে। ১৯৭১ সালে বছরব্যাপী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হলেও, ১৪ ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যার শিকার হন।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ১৯৭২ সালে তাজউদ্দিন আহমেদ এক কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু সেটি কার্যকর হয়নি। বিভিন্ন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে রাও ফরমান আলীর নাম উঠে আসে, যিনি বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যার পরিকল্পনার সাথে জড়িত বলে অভিযুক্ত ছিলেন। জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ও এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৭ সালে রমনা থানায় প্রথম মামলা দায়ের করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুর ও রায়েরবাজারে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। আজও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতি তাদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানায় এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়কে স্মরণ করে।