চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দান: এক অতীতের সাক্ষী
চট্টগ্রাম শহরের ঐতিহ্যের ধারক লালদীঘি ময়দান, নগরীর জেল রোডের শেষ প্রান্তে অবস্থিত ২.৭০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। একসময়ের মিউনিসিপাল ময়দান হিসেবে পরিচিত এ স্থানটিতে ইংরেজ শাসনামলে লালদীঘি, লালকুঠি, লালঘরের মতো ঐতিহাসিক স্থাপনা ছিল। লালদীঘির নামকরণের পেছনেও রয়েছে একটি ঐতিহাসিক কাহিনী। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে লাল রঙে রাঙানো দুটি ভবন - জমি সংক্রান্ত তহসিল অফিস (বর্তমান মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিস) ও জেলখানা - এর পাশে অবস্থিত ছোট পুকুরটিকে বড় করে দীঘিতে পরিণত করার পর এই নামকরণ হয়।
১৭৬১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চট্টগ্রামের শাসনভার গ্রহণ করলে এই এলাকায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। লালদীঘির উত্তর পাশে রয়েছে ‘রায় বাহাদুর রাজকুমার ঘোষ স্কয়ার’, যা ১৯৩৯ সালে নির্মিত। রায় বাহাদুর রাজকুমার ঘোষ ছিলেন একজন জমিদার, যিনি লালদীঘির অভিভাবক ছিলেন এবং পরবর্তীতে এর মালিকানা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেন। লালদীঘির পশ্চিম পাশে ছিল ‘রিকেট ঘাট’। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের কমিশনার স্যার হেনরি রিকেটসের নামানুসারে এই ঘাটের নামকরণ হয়। এই ঘাটের উত্তর দিকে ঊনবিংশ শতকের চট্টগ্রামের সেশন জজ টোডেল সাহেবের শবদেহ দাহ করা হয়েছিল।
ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে উত্তর-দক্ষিণ রাস্তা নির্মাণের পর মিউনিসিপাল ময়দান দুই ভাগে বিভক্ত হয়। পূর্ব দিকটি জনসাধারণের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতো এবং পরবর্তীতে মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে পরিণত হয়। এখন এটি লালদীঘির মাঠ নামে পরিচিত। ১৮৮৭ সালে এখানে মহারানী ভিক্টোরিয়ার মূর্তি স্থাপন করা হয়, যা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় অপসারিত হয়।
লালদীঘি নিয়ে জনশ্রুতিও রয়েছে। একটি জনপ্রিয় কাহিনী বলে, একদিনমজুরের মেয়েকে পানির নিচের এক রাজার দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার সাথে লাল বেগম নামের একজনের পলায়নের ঘটনা জড়িত। এই কাহিনীতে লালদীঘির পানি লাল হয়ে যাওয়ার বর্ণনা রয়েছে।
১৯১০ সাল থেকে লালদীঘির পাড়ে প্রতি বছর বৈশাখের ১২ তারিখ আবদুল জব্বারের ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে লালদীঘির পশ্চিম পাশে একটি মসজিদ ও একটি পার্ক রয়েছে। লালদীঘি ময়দান চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।