লামা উপজেলা প্রশাসন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হলো। লামা উপজেলা বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা, যা বান্দরবান জেলার সবচেয়ে জনবহুল উপজেলার মর্যাদা রাখে। এর আয়তন ৬৭১.৮৪ বর্গ কিলোমিটার।
- *ঐতিহাসিক পটভূমি:** লামা নামের উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কিংবদন্তি অনুসারে, 'আহলামা' নামক এক মার্মা নারীর নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়। ১৫১৪ সালে ত্রিপুরা রাজা ধন মানিক্য চট্টগ্রাম দখল করেন, এবং লামা এলাকায় তাঁর প্রভাব বিস্তার করেন। ১৬১৪ সালে বোমাং রাজার পূর্বপুরুষরা আরাকান রাজার অধীনে চট্টগ্রাম শাসন করেন, পরে ১৬৬৬ সালে মুঘলদের কাছে হেরে আরাকানে ফিরে যান। বার্মিজ আক্রমণের পর, অনেক মগ জনগোষ্ঠী (মারমা ও রাখাইন) বাংলায় আশ্রয় নেয়, এবং বৃহত্তর লামা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। ১৮৬০ সালে ব্রিটিশরা পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা গঠন করলে বৃহত্তর লামা বোমাং সার্কেলের অংশ হয়ে ওঠে। ১৯২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর লামা থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৫ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
- *প্রশাসনিক কাঠামো:** লামা উপজেলা প্রশাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, থানা পুলিশ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তর এবং বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে বিভক্ত।
- *জনসংখ্যা ও ধর্ম:** ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লামার জনসংখ্যা ১,০৮,৯৯৫ জন, এবং ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ১,৩৯,৬৮১ জন। মুসলিম, বৌদ্ধ, হিন্দু, এবং খ্রিস্টানদের বসবাস এখানে রয়েছে। এছাড়াও মার্মা, ত্রিপুরা, মুরং, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও খেয়াং উপজাতির বসবাস রয়েছে।
- *মুক্তিযুদ্ধ:** মুক্তিযুদ্ধের সময় লামা উপজেলা ১নং সেক্টরের অধীনে ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সক্রিয়তা কম ছিল, তবে রাজাকার ও পাকিস্তান সমর্থক ফুরুইক্ষা বাহিনী অত্যাচার চালিয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ লামা থানা আক্রমণ করে বিজয় অর্জন করেছিলেন।
- *উন্নয়ন:** ১৯৭০ সালে লামা মহকুমা গঠিত হয়, এবং ১৯৮২-৮৩ সালে লামাকে অল্প সময়ের জন্য জেলা ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৯-৮০ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নদী ভাঙ্গা ভূমিহীন ও দরিদ্র মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য লামায় প্রকল্প গ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি লামায় আগমন করেন। লামা-আলীকদম সড়ক নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, হাসপাতাল, মহকুমা কমপ্লেক্স, হাই স্কুল সরকারীকরণের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে লামাকে পুনরায় উপজেলায় নামানো হয়, যা জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
- *অর্থনীতি:** লামার অর্থনীতি প্রধানত কৃষিভিত্তিক। রাবার, তামাক, আদা, হলুদ, ধান ইত্যাদি উৎপাদন হয়। লামায় রাবার বাগান ও বিভিন্ন ফলের বাগান রয়েছে। ফাঁসিয়াখালীর ইয়াংছা এলাকার মিজ্ঝিরিতে গ্যাস ও রূপসীপাড়ায় কয়লার খনি আছে।
- *যোগাযোগ:** লামার প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম পূর্বাণী চেয়ারকোচ এবং জীপগাড়ি। বান্দরবান-লামা এবং চকরিয়া-লামা সড়ক প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা।
- *ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান:** লামা উপজেলায় মসজিদ, মন্দির, বিহার ও গীর্জা রয়েছে।
- *শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:** লামা উপজেলায় কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
- *দর্শনীয় স্থান:** লামা উপজেলায় অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
- *উপজেলা জেলাকরণের চেষ্টা:** লামা উপজেলার জনসংখ্যা ও আয়তন বিবেচনা করে একে জেলা ঘোষণার দাবী উঠে আসে। বেশ কয়েকটি সংগঠন এ ব্যাপারে কাজ করছে।