রেসিপি: রান্নার শিল্পের মূলমন্ত্র
রেসিপি, শুধুমাত্র একটি রান্নার নির্দেশিকা নয়, এটি একটি সংস্কৃতির, ঐতিহ্যের, এবং সৃজনশীলতার ধারক। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ শতকে প্রাচীন গ্রিসে মিথাকাসের লেখা ‘সিসিলিয়ান কুক’ বইটিই হয়তো পৃথিবীর প্রথম রেসিপি বই। জলপাই তেল ও পনিরের ব্যবহারে সিসিলীয় খাবারের জনপ্রিয়তা ছিল অপরিসীম। একই সময়ে টার্পসিওন গ্রিসে একটি রান্নার স্কুল ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রোমান সাম্রাজ্যে ক্যাটো দ্য এল্ডারের ‘De Agri Cultura’ বইয়েও রেসিপির উল্লেখ পাওয়া যায়। ৪র্থ বা ৫ম শতকে লেখা ‘Apicius’ বইটি ক্লাসিকাল যুগের একমাত্র সম্পূর্ণ রেসিপি বই।
মধ্যযুগে ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড দ্বিতীয় ১৩৯০ সালে ‘Forme of Cury’ নামক রেসিপি বই তৈরি করান। ‘Curye on Inglish’ নামক আরেকটি বইয়েও সেসময়ের রান্নার ধারণা পাওয়া যায়। ১৬ ও ১৭ শতকে ছাপাখানার আবির্ভাবের সাথে সাথে রান্নার বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। হল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয় কে কত বিলাসী ভোজনের আয়োজন করতে পারে।
১৯ শতকে ভিক্টোরিয়ান যুগে এলিজা অ্যাক্টনের ‘Modern Cookery for Private Families’ (১৮৪৫) বইটি আধুনিক রেসিপি বইয়ের ধারা স্থাপন করে। ইসাবেলা বিটনের ‘Mrs Beeton's Book of Household Management’ (১৮৫৭-১৮৬১) বইটিও অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। আমেরিকায় ফ্যানি ফারমারের ‘The Boston Cooking School Cookbook’ (১৮৯৬) বইটি একটা যুগান্তকারী ঘটনা ছিল।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি হাজার হাজার রান্নার বই বাজারে ছিল। পরে টেলিভিশনের রান্নার অনুষ্ঠানগুলি রেসিপি শেয়ার করার নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করে। ইন্টারনেটের আবির্ভাব আরও ব্যাপকভাবে রেসিপি শেয়ার করার সুযোগ করে দেয়। আজকাল ইউটিউব, ব্লগ ও অন্যান্য অনলাইন প্লাটফর্মে রেসিপি সহজেই পাওয়া যায়। আধুনিক মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার রেসিপিগুলিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে।