রেজা শাহ পাহলভী: আধুনিক ইরানের স্থপতি?
রেজা শাহ পাহলভী (১৫ মার্চ, ১৮৭৮ - ২৬ জুলাই, ১৯৪৪) ইরানের একজন প্রভাবশালী শাসক ছিলেন, যিনি ১৯২৫ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ইরানের শাহ হিসেবে শাসন করেছিলেন। তিনি পাহলভী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং ইরানের আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলে মনে করা হয়। তবে, তার শাসনামল বিতর্কমুক্ত নয় এবং তার রাজত্বকে একনায়কত্বের আখ্যায়িত করা হয়।
প্রারম্ভিক জীবন ও সামরিক ক্যারিয়ার: রেজা শাহের জন্ম ইরানের মাজান্দারান প্রদেশের আলাশত গ্রামে। তিনি পারস্য কস্যাক ব্রিগেডে যোগদান করেন এবং ক্রমশ সেনাবাহিনীতে উন্নীত হন। ১৯২১ সালে তিনি এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন।
শাহ হিসেবে রাজত্ব: কাজার রাজবংশের পতনের পর রেজা শাহ শাহানশাহ হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। তার শাসনামলে ইরানে ব্যাপক সংস্কারের সূচনা হয়।
সংস্কারসমূহ: রেজা শাহের শাসনামলে ইরানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- সামরিক সংস্কার: আধুনিক সামরিক বাহিনী গঠন করা হয়।
- প্রশাসনিক সংস্কার: কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।
- বিচার ব্যবস্থার সংস্কার: পাশ্চাত্য আইন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
- শিক্ষা সংস্কার: শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হয় এবং তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
- অর্থনৈতিক সংস্কার: অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা নেয়া হয়। ট্রান্স-ইরানিয়ান রেলপথ নির্মাণ করা হয়।
- সামাজিক সংস্কার: নারীদের ভূমিকা বৃদ্ধি এবং পশ্চিমা পোশাককে উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়।
ক্ষমতাচ্যুতি ও মৃত্যু: ১৯৪১ সালে মিত্রশক্তির আক্রমণের ফলে রেজা শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ১৯৪৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় তার মৃত্যু হয়।
ঐতিহাসিক মূল্যায়ন: রেজা শাহের শাসনামল ইরানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। তিনি আধুনিক ইরানের ভিত্তি স্থাপন করেন বলে মনে করা হয়, তবে তার একনায়কতান্ত্রিক শাসন ও বিতর্কিত সামাজিক সংস্কারগুলির জন্য সমালোচনার মুখেও পড়েন।