বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন: বাংলাদেশের অমর সন্তান
১৯৩৫ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাঁচড়া (বর্তমানে রুহুল আমিন নগর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ রুহুল আমিন। তিনি ছিলেন বাবা আজহার পাটোয়ারী এবং মা জোলেখা খাতুনের প্রথম সন্তান। শিক্ষাজীবন শুরু করেন বাঘপাঁচড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং পরে আমিশাপাড়া কৃষক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৫৩ সালে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন। পাকিস্তান নৌবাহিনীর বিভিন্ন জাহাজ যেমন পি.এন.এস. বাহাদুর, পি.এন.এস. কারসাজ, পি.এন.এস. বাবর, পি.এন.এস. খাইবার এবং পি.এন.এস. তুঘরিলে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের পি.এন.এস. বখতিয়ার নৌঘাঁটিতে বদলি হন।
মুক্তিযুদ্ধের সময়:
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনী থেকে পালিয়ে যান এবং বাড়িতে গিয়ে ছাত্র, যুবক ও সামরিক আধাসামরিক বাহিনীর লোকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেন। এর কিছুদিন পর ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত অতিক্রম করে আগরতলা সেক্টর প্রধান কোয়ার্টারে যান এবং সেখানে মেজর শফিউল্লাহর অধীনে ২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের উদ্যোগের সাথে যুক্ত হন এবং কলকাতায় ১০ নং নৌ সেক্টরে যোগ দেন। ভারত সরকারের উপহারপ্রাপ্ত ‘পলাশ’ নামক গানবোটের ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শাহাদত:
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর খুলনার মংলা বন্দরের কাছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ভুলবশত বোমা হামলায় ‘পলাশ’ গানবোটে আঘাত লাগে। এই হামলায় রুহুল আমিন গুরুতর আহত হন এবং পরে রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। তার মৃতদেহ রূপসা নদীর তীরে উদ্ধার করা হয় এবং বাগমারা গ্রামে সমাহিত করা হয়। তার বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে মরণোত্তর ‘বীর শ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
স্মৃতি:
রুহুল আমিনের নামে রো-রো ফেরি, চট্টগ্রামে বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম, এবং নোয়াখালীতে রুহুল আমিন স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার নির্মিত হয়েছে। তার জন্মস্থান বাঘপাঁচড়া গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রুহুল আমিন নগর রাখা হয়েছে।