রাসায়নিক বিস্ফোরণ: লেবানন ও বাংলাদেশের দুর্ঘটনা
বিশ্বে রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু লেবাননের বৈরুতে ২০২০ সালের ৪ঠা আগস্টে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত একাধিক রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঘটনা আবারও সামনে তুলে ধরেছে রাসায়নিক পদার্থের অসাবধানতায় ব্যবহার ও সংরক্ষণের ঝুঁকি।
লেবাননের বৈরুত বিস্ফোরণ:
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ২০২০ সালের ৪ঠা আগস্ট বন্দরে সংঘটিত এই বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৩৭ জন প্রাণ হারায় এবং প্রায় ৫০০০ মানুষ আহত হয়। বন্দরের ১২ নম্বর গুদামে ছয় বছর ধরে অযতœভাবে সঞ্চিত ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণের ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের আগে গুদামে আগুন লেগেছিল বলে ধারণা করা হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, এর ধাক্কায় কিলোমিটার দূর থেকেও শব্দ শোনা যায়, এবং বন্দরের আশপাশের ভবনগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এই বিস্ফোরণের জন্য অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে দায়ী করেন। মলডোভিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রোসাস ২০১৩ সালে এই রাসায়নিক বহন করে বৈরুতে নোঙর করেছিল এবং কারিগরি ত্রুটির কারণে জাহাজটি বন্দরে আটকা পড়ে। পরে জাহাজের মালিক জাহাজটি পরিত্যাগ করে যায় এবং রাসায়নিকগুলো গুদামে সঞ্চিত থাকে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন রাসায়নিক বিস্ফোরণ:
বাংলাদেশেও রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সীতাকুণ্ডে ২০২১ সালের ৪ঠা জুন কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে কয়েকজনের মৃত্যু ও আহত হয়। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের মতো দাহ্য পদার্থের বিস্ফোরণের ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকার সায়েন্স ল্যাব ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গ্যাস লিকের কারণে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ২০২৩ সালে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে কয়েকজন নিহত হয়। এই ঘটনাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রমাণ মেলে।
উপসংহার:
রাসায়নিক বিস্ফোরণ প্রতিরোধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, রাসায়নিক পদার্থের সঠিক সংরক্ষণ ও পরিবহন, এবং দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কঠোর তত্ত্বাবধান অত্যন্ত প্রয়োজন। এছাড়া জনসাধারণকে সচেতন করে তোলাও জরুরি।