রাষ্ট্রদূত: আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্য একটি স্বাধীন দেশ, সরকার অথবা আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখার জন্য প্রেরিত উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদূত বলে। তিনি নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অতীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে দেশের মধ্যে যোগাযোগে সময় লাগতো, ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হত। রাষ্ট্রদূতদের নিয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যা অনেকটা কমেছে। যদিও বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলেও, জটিল রাষ্ট্রীয় সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রদূতদের ভূমিকা অপরিহার্য।
রাষ্ট্রদূতরা সাধারণত বহির্দেশে কয়েক বছর অবস্থান করেন এবং সেই দেশের আইনকানুন, রীতি-নীতি, সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। তাদের বাসস্থানকে দূতাবাস বলা হয়, যা সাধারণত বৈদেশিক রাষ্ট্র কর্তৃক বরাদ্দকৃত হয় এবং দেশটির রাজধানীতে অবস্থিত। রাষ্ট্রদূতের সাথে একদল প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা কাজ করেন। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের দূতাবাসের কর্মকর্তা হিসেবেও নিয়োগ করা হয়।
রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা কূটনৈতিক সুবিধা ভোগ করেন এবং বিদেশে থাকাকালীন গ্রেফতার অথবা বিচারের মুখোমুখি হন না। শাস্তি হিসেবে তাদেরকে কেবলমাত্র নিজ দেশে ফিরিয়ে পাঠানো হয়। কমনওয়েলথভুক্ত দেশের কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের হাইকমিশনার বলা হয়। হলি সি'র প্রতিনিধিকে পপল বা এপোসটোলিক নানসিও বলা হয়।
বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য দেশ থেকে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের 'অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ' হিসেবে প্রেরণ করা হয়। তারা কাজের গুণগতমান সম্পর্কে অবগতকরণ ও সরকারের চিন্তাধারা সম্পর্কে বিশ্লেষণধর্মী বক্তব্য প্রদান করেন। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, রাষ্ট্রদূত এবং অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ-গণ আনুষ্ঠানিকভাবে কুচকাওয়াজে অংশ নেন।
'অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ' পদে উচ্চপদস্থ কূটনীতিক অথবা মন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়। তারা প্রতিবেশী দেশ, অঞ্চল অথবা আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন জাতিসংঘ অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ রাখেন। কিছু ক্ষেত্রে তারা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে রাষ্ট্র কিংবা সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরেন।
কম গুরুত্বপূর্ণ ধারণায় 'অ্যাম্বাসেডর' শব্দটি উচ্চ পর্যায়ের অ-কূটনীতিবিদ প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরিত হন, যা শুভেচ্ছা দূত নামে পরিচিত। সাধারণতঃ সাংস্কৃতিক ও দাতব্য সংস্থার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতনতা ও মনোযোগ আকর্ষণের জন্য গণমাধ্যমে তারা উপস্থাপিত হন। ফ্রান্স, ওয়ালোনিয়া অথবা কুইবেকে এ পদবীটি 'অ্যাম্বাসাদিউর পার্সন' নামে ব্যবহার করা হয়। রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্ব শান্তি বজায় রাখার জন্য এদের অবদান অসীম।