রাজস্ব ফাঁকি

আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪:৪৬ পিএম

রাজস্ব ফাঁকি: জটিলতার জাল ও তদন্তের গল্প

বাংলাদেশে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা নতুন নয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও সংগঠন এর সাথে জড়িত থাকে। এই প্রতিবেদন গুলশানের একটি চাঞ্চল্যকর রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা এবং এনবিআর কর্তৃক পরিচালিত ব্যাপক তদন্তের বিস্তারিত তুলে ধরে।

গুলশানের রাজস্ব ফাঁকি:

২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর, ঢাকার গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। একটি দশতলা ভবন ও ২৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণের তথ্য গোপন করে শুধু জমির অংশ রেজিস্ট্রি করা হয়। এতে সরকার প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব হারায়। আমমোক্তারনামা দলিল বাতিলের পর ১২ জন ডেভেলপারের নামে জমির অংশের সাবকবলা রেজিস্ট্রি করা হয়। সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার, দুইজন দলিল লেখক এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের একটি চক্র দাতা-গ্রহীতার সাথে যোগসাজশে এই অবৈধ রেজিস্ট্রি করে। তদন্তে উঠে আসে ৯২ লাখ ৯৭ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ। আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এই পরিমাণ ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা হিসেবে উঠে আসে।

জড়িত ব্যক্তিবর্গ:

  • মো. আব্দুল হামিদ: জমির মালিক।
  • আক্তারুজ্জামান বুলবুল ও শামীম আহমেদ: দুইজন দলিল লেখক যারা এই ফাঁকিতে জড়িত।
  • রফিকুল ইসলাম: গুলশান সাব-রেজিস্ট্রার, যিনি অসুস্থতার কারণে ছুটিতে ছিলেন।
  • লুৎফর রহমান মোল্লা: উত্তরা সাব-রেজিস্ট্রার, যিনি রফিকুল ইসলামের অবর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।
  • অ্যাড. কাজী জহিরুল ইসলাম: একজন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী, যাঁর লাইসেন্স নম্বর দলিলে উল্লেখ করা হয়নি।

স্থান:

  • গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ঢাকা।
  • উত্তরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ঢাকা।
  • তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স, ঢাকা।

এনবিআর'র তদন্ত ও অন্যান্য রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা:

এনবিআর ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের সাত হাজার ৭১ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করে। এছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম তিন মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার শুল্ক-কর ফাঁকি উদ্ঘাটন করে। এস আলম গ্রুপের সহযোগী নয়টি প্রতিষ্ঠানের আরও এক হাজার ৪১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়। সিপিডি'র গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি বছর ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি হয়।

তদন্তের অবস্থা:

গুলশানের ঘটনায় তদন্ত চলছে। লুৎফর রহমান মোল্লাসহ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা হয়েছে। চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর। এনবিআর-এর তদন্তও চলমান রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংগঠন:

  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)
  • দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
  • সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)
  • এস আলম গ্রুপ

উল্লেখ্য: এই প্রতিবেদনে কেবল প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। তদন্তের পর্যায়ে থাকায় কিছু তথ্য অসম্পূর্ণ থাকতে পারে। আরও তথ্য পাওয়া গেলে আপডেট দেওয়া হবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • গুলশানে ২ সেপ্টেম্বর একটি দশতলা ভবন ও ২৪টি ফ্ল্যাটের তথ্য গোপন করে রাজস্ব ফাঁকি
  • ৯২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে
  • এনবিআর এস আলম গ্রুপের ৭৭১০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে
  • সিপিডি'র গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি বছর ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি হয়
  • লুৎফর রহমান মোল্লাসহ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা হয়েছে

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।