মেরিনা তাবাসসুম: বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট স্থপতি
মেরিনা তাবাসসুম বাংলাদেশের একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান ও স্বীকৃত স্থপতি। তিনি 'মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস' নামক নিজস্ব স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তার স্থাপত্যকর্ম শুধুমাত্র সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষার দিকেও গুরুত্বারোপ করে। তার জীবন ও কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো নিম্নে তুলে ধরা হল:
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
মেরিনা তাবাসসুম ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় তার পরিবার ভারত থেকে ঢাকায় আসে। তিনি ঢাকার হলি ক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এবং কলেজে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন:
স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভের পর ১৯৯৫ সালে স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর সাথে মিলে তিনি 'আরবানা' নামক একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় দশ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পর ২০০৫ সালে তিনি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান 'মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস' প্রতিষ্ঠা করেন এবং বর্তমানে এর প্রধান স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যকর্ম:
মেরিনা তাবাসসুমের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপত্যকর্ম হল ঢাকার দক্ষিণখানে অবস্থিত বায়তুর রউফ মসজিদ। এই মসজিদের স্থাপত্যের জন্য তিনি ২০১৬ সালে আগা খান পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত ভূগর্ভস্থ স্বাধীনতা জাদুঘরেরও একজন নকশাকার।
শিক্ষা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড:
তিনি ২০০৫ সাল থেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শন অধ্যাপক হিসেবে সমসাময়িক দক্ষিণ এশীয় স্থাপত্যের উপর শিক্ষাদান করে আসছেন। এছাড়াও, তিনি এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি স্থাপত্য, ভূদৃশ্য এবং বসতিগুলির জন্য বেঙ্গল ইনস্টিটিউটে একাডেমিক প্রোগ্রামের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
স্বীকৃতি ও সম্মাননা:
মেরিনা তাবাসসুমের স্থাপত্যকর্ম ও অবদানের জন্য তিনি বহু সম্মাননা ও পুরষ্কার লাভ করেছেন। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ যুগের তৃতীয়-বৃহত্তম চিন্তাবিদ হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। মার্কিন সাময়িকী টাইম-এর ২০২৪ সালের বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় তিনি স্থান পান।
মেরিনা তাবাসসুমের স্থাপত্যকর্ম বাংলাদেশের স্থাপত্যের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি শুধুমাত্র একজন স্থপতি নন, একজন দর্শনীয় ব্যক্তিত্ব, যিনি পরিবেশ সচেতনতা ও টেকসই উন্নয়নের মূল্যবোধ বহন করেন।