মুফতি আতিকুর রহমান নামটি দুইজন ব্যক্তিকে নির্দেশ করতে পারে, তাই স্পষ্টতার জন্য আমরা তাদের পৃথকভাবে আলোচনা করব।
১. আতিকুর রহমান উসমানি (১৯০১-১৯৮৪): একজন বিশিষ্ট ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী। তিনি দেওবন্দে ১৯০১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আজিজুর রহমান উসমানি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি ছিলেন। আতিকুর রহমান উসমানি দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি আনোয়ার শাহ কাশ্মীরির অধীনে পড়াশোনা করেন। পিতার তত্ত্বাবধানে ফতোয়া অনুশীলন করেন এবং পরে সহকারী মুফতি হন। কিছুদিন জামিয়া ইসলামিয়া তালিমুদ্দিনেও শিক্ষকতা করেন।
১৯৩৮ সালে হামিদ আল-আনসারি গাজী, হিফজুর রহমান সিওহারভি এবং সাঈদ আহমেদ আকবরাবাদীর সাথে নাদওয়াতুল মুসান্নিফিন প্রতিষ্ঠা করেন। হিফজুর রহমান সিওহারভির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং আহমেদ সাঈদ দেহলভির মৃত্যুর পর জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের কার্যকরী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সালে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবর্তী বছর অল ইন্ডিয়া মুসলিম মজলিস-ই-মুশাওয়ারাত প্রতিষ্ঠা করেন এবং সৈয়দ মাহমুদের পর এর সভাপতি হন। তিনি ১২ মে ১৯৮৪ সালে দিল্লিতে মারা যান এবং মেহদিনে শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভির কবরের কাছে সমাহিত হন। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং পানি ও লবণের উপর কর আরোপের বিরুদ্ধে ধর্মীয় রায় দিয়েছিলেন। তিনি ইবনে তাইমিয়ার ‘আল-কালিম আল-তায়িব’ গ্রন্থটি উর্দুতে অনুবাদ করেন এবং নাদওয়াতুল মুসান্নিফিনে ‘বুরহান’ নামে একটি সাময়িকী চালু করেন।
২. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান (১৯৩১-২০২৩): একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার খারেরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। এরশাদের অভ্যুত্থানের সময় তিনি মেজর জেনারেল এবং বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রধান ছিলেন। ২৪শে মার্চ ১৯৮২ সালে, বিমান বাহিনীর প্রধান ও নৌবাহিনীর প্রধানের সাথে মিলে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের কাছে একটি লিখিত বক্তব্য রেখে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ দখল করেন। এরশাদের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ১৯৮৬ সালের ৩১শে আগস্ট সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন এবং ১৯৯০ সালের ৩০শে আগস্ট অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও ২০১৪ সালে খালেদা জিয়ার ইফতারে যোগ দিয়েছিলেন।