মাহফিল

আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০৫ এএম

ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই ওয়াজ-নসিহতের ধারা অব্যাহত আছে। এই ওয়াজ-নসিহত কখনও জাঁকজমকপূর্ণ মাহফিলে, কখনও আবার একান্তে, ব্যক্তিগতভাবে বা বিভিন্ন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন নামে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ওয়াজ-মাহফিল সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত পরিসরের পাঠশালা। হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) লিখেছেন, বৃদ্ধদের দ্বীন শেখার অন্যতম মাধ্যম হল ওয়াজ শোনা। ওয়াজের অর্থ হল বক্তৃতা, উপদেশ, নসিহত। ওয়াজ করা ব্যক্তিকে ওয়ায়েজ বা বক্তা বলা হয়। আদর্শ সমাজ গঠনে ওয়াজ-নসিহতের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি দ্বীন প্রচারের একটি অপরিসীম মাধ্যম এবং মানুষের ঈমান, আমল ও আখলাক পরিশুদ্ধ করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আল্লাহ তাআলাও বান্দাদের উদ্দেশ্যে ওয়াজ করেছেন। কুরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ ইনসাফ, দয়া, আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও জুলুম থেকে নিষেধ করেছেন; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (আন-নাহল : ৯০)। নবী-রাসূলগণেরও উম্মতের উদ্দেশ্যে ওয়াজ-নসিহত করা মৌলিক দায়িত্ব ছিল। উলামায়ে কেরাম আমাদের নবী (সা.)-এর উত্তরাধিকারী হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত এটি অব্যাহত রাখার দায়িত্ব পালন করেন। এই উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব এ কারণে যে, তারা ভালো কাজের আদেশ দানকারী ও অসৎ কাজ হতে নিষেধকারী। (আলে ইমরান : ১১০)।

ওয়াজ করার পূর্বশর্ত হলো ওয়ায়েজের পর্যাপ্ত ইলমি যোগ্যতা এবং নবী (সা.) এর আদর্শে আদর্শবান হওয়া। আলেমগণ ওয়ায়েজের প্রাথমিক গুণাবলী হিসেবে উল্লেখ করেছেন: প্রাপ্তবয়স্ক ও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়া, ন্যায়পরায়ণ হওয়া, হাদিসের অর্থ, ব্যাখ্যা ও হাদিস শাস্ত্রের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা, কোরআনের তাফসির জানা এবং পূর্বসূরি তাফসিরকারদের তাফসির সম্পর্কে জ্ঞান থাকা।

ওয়াজ মাহফিলে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অপরিহার্য। যেমন মুখলিস বক্তা নির্বাচন, বেআমল বক্তাকে দাওয়াত না দেওয়া, বিষয়বস্তু নির্ধারিত থাকা, সভা স্থলের বাহিরে মাইক ব্যবহার না করা, বানোয়াট কাহিনী থেকে মুক্ত থাকা, মিতব্যয়ীতা এবং মাহফিল গভীর রাত পর্যন্ত না বাড়ানো। কিছু মানুষের ধারণা যে, এত ওয়াজ মাহফিল হওয়া সত্ত্বেও মানুষ হেদায়েত হচ্ছে না। কিন্তু হেদায়েতের মালিক আল্লাহ, তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন। আলেমদের কাজ হল হক-বাতিল, হালাল-হারামের কথা বলা। ওয়াজকারীদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শ্রোতাদের দুনিয়া বিমুখ করা এবং নিজেও দুনিয়া বিমুখ হওয়া। ওয়াজ-নসীহতের ভিত্তি কুরআন ও সুন্নাহ হতে হবে।

ওয়াজ মাহফিলের অন্যতম উপকারিতা হল, এতে অনেকেই সওয়াবের ভাগীদার হয়। মাহফিলে আমলের কথা শুনে যারা আমল করে, ওয়াজকারী এবং মাহফিলের আয়োজক সকলেই সওয়াব লাভ করে। ওয়াজ মাহফিল উপমহাদেশের মুসলিমদের ইসলামি নসিহত, উপদেশ, জ্ঞান বিতরণ ও ইসলামি পরামর্শ প্রদান করার একটি জনপ্রিয় পাবলিক স্থান। বাংলাদেশে ইব্রাহীম আলী তশনাকে ইসলামী জলসার প্রবর্তক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯০৬ সালে তিনি সর্বসাধারণের মধ্যে ইসলামি জ্ঞান বিতরণের উদ্দেশ্যে ইসলামী জলসার আয়োজন করেন। ওয়াজ মাহফিল দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। ওয়াজ মাহফিল কখনও কখনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হয়, যা মূল উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • ওয়াজ-নসিহত ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই চলে আসছে।
  • ওয়াজ-মাহফিল বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য একটি পাঠশালা।
  • আদর্শ সমাজ গঠনে ওয়াজ-নসিহতের গুরুত্ব অপরিসীম।
  • ওয়াজ মাহফিল ইসলাম প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
  • ওয়াজ মাহফিলে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - মাহফিল

মিজানুর রহমান আজহারি কক্সবাজারে মাহফিলে অংশগ্রহণ করেছেন।

২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

কক্সবাজারের পেকুয়ায় এক বিশাল মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

২৫ জানুয়ারি

এই দিন পটুয়াখালীতে মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।