মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়
বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল সাটুরিয়া। ১৪০.১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ২৩°৫১´ থেকে ২৪°০৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৫´ থেকে ৯০°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে নাগরপুর ও ধামরাই, দক্ষিণে মানিকগঞ্জ সদর, পূর্বে ধামরাই এবং পশ্চিমে দৌলতপুর ও ঘিওর উপজেলার সাথে এর সীমানা সংলগ্ন। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সাটুরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ১৭১৪৯৪, যার মধ্যে পুরুষ ৮৩৬৫৩ এবং মহিলা ৮৭৮৪১। ধর্মীয়ভাবে, অধিকাংশই মুসলিম (১৫৬৭৩২), হিন্দু (১৪৭২৭), খ্রিস্টান (২৫) এবং অন্যান্য (১১)।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
সাটুরিয়ার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বালিয়াটির জমিদার বাড়ি, ধানকোড়া জমিদার বাড়ি, রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম (১৯১০), এবং কালুশাহের মাযার এই উপজেলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাটুরিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাটুরিয়া থানা যুদ্ধ, তিল্লী গ্রামের যুদ্ধ এবং বনমালিপুরের যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন। সাটুরিয়া থানার পাশে একটি গণকবর এবং সাটুরিয়া পাইলট হাইস্কুল এলাকায় একটি বধ্যভূমি এই মুক্তিযুদ্ধের যন্ত্রণার স্মারক।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন:
সাটুরিয়ার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, সরিষা, আখ, আলু প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও উল্লেখযোগ্য। শিল্প ক্ষেত্রে চালকল, আটাকল, বরফকল, করাতকল, মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কুটিরশিল্পের মধ্যে স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সাটুরিয়া হাট, হরগজ হাট, দরাগ্রাম হাট সহ অন্যান্য হাটবাজার এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
শিক্ষার দিক থেকে সাটুরিয়া উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। এখানে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকে, যেমন কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা। স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র কাজ করে থাকে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
সাটুরিয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে অনেকবার। ১৯৮৯ সালের টর্নেডো এই উপজেলার অনেক ক্ষতি করেছিল।
সারসংক্ষেপে, সাটুরিয়া উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উপজেলার উন্নয়নে এখনও অনেক কাজ করার থাকে, তবে অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য।