মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক: একজন বিশিষ্ট হাদিস বিশেষজ্ঞ ও ফকিহ
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক (জন্ম: ২৯ আগস্ট ১৯৬৯) বাংলাদেশের একজন অত্যন্ত সম্মানিত হাদিস বিশেষজঞ্ঞ, হানাফী ফকিহ এবং বর্তমানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব। তিনি তার গভীর ধর্মীয় জ্ঞান, গবেষণামূলক কাজ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সারা দেশে পরিচিত। তার জন্ম কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার সারাশপুরে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার পিতা শামসুল হক একজন আলেম ছিলেন, যিনি তার প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
শিক্ষা ও গবেষণা:
মাওলানা আব্দুল মালেক কওমি মাদ্রাসা ব্যবস্থার মাধ্যমে তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। চাঁদপুরের শাহরাস্তি খেড়ীহর কওমি মাদ্রাসায় মিশকাত জামাত পর্যন্ত অধ্যয়ন করার পর, ১৯৮৮ সালে তিনি পাকিস্তানের জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি তিন বছর আব্দুর রশীদ নোমানীর কাছে উচ্চতর হাদিসশাস্ত্র এবং দুই বছর দারুল উলুম করাচিতে তাকি উসমানির কাছে উচ্চতর ফিকহ ও ফতোয়া অধ্যয়ন করেন। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবে আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর সাথে হাদিসশাস্ত্রে গবেষণামূলক কাজে জড়িত ছিলেন।
১৯৯৮ সালে তার রচিত ‘আল মাদখাল ইলা উলুমিল হাদিসিশ শরিফ’ প্রকাশিত হয়, যা বিভিন্ন দেশে পাঠ্যবই হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই গ্রন্থের জন্য তিনি আলেমদের মধ্যে বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেন।
প্রতিষ্ঠানিক ভূমিকা ও অবদান:
মাওলানা আব্দুল মালেক ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসচিব ও উচ্চতর হাদিস বিভাগের প্রধান। ২০০৫ সালে তার তত্ত্বাবধানে মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মুখপত্র ‘আল কাউসার’ প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন (২০১২) এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের জাতীয় চাঁদ দেখা উপকমিটির প্রধান (২০১৯) ছিলেন। তিনি ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি গঠিত জাতীয় মুফতি বোর্ডের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও, তিনি জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া ঢাকার শায়খুল হাদিস এবং ঢাকার শান্তিনগরের আজরুন কারিম জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৪ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হিসেবে নিযুক্ত হন।
স্বীকৃতি ও প্রশংসা:
মাওলানা আব্দুল মালেকের গভীর জ্ঞান ও অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন আলেম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে প্রশংসা লাভ করেছেন। তার শিক্ষকগণও তার প্রতিভা ও জ্ঞানের প্রশংসা করেছেন। তার জীবনীগ্রন্থ ‘কালিমাতুন আন সিরাতিল মুহাদ্দিস ওয়াল ফকিহ আশ শায়খ মুহাম্মাদ আবদুল মালেক আল-কুমিল্লায়ী’ ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়েছে।