মহেশ ভাট: একজন কিংবদন্তী পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার
ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের একজন অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হলেন মহেশ ভাট। ১৯৪৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তি হিন্দি চলচ্চিত্রে পরিচালক, প্রযোজক এবং চিত্রনাট্যকার হিসেবে বিখ্যাত। তার বাবা নানাভাই ভাট ছিলেন হিন্দু নগর ব্রাহ্মণ, আর মা শিরিন মোহাম্মদ আলী ছিলেন গুজরাতি মুসলমান। এই মিশ্র পরিবেশে বেড়ে ওঠা মহেশ ভাটের জীবন ও কর্মজীবন অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।
ডন বস্কো হাই স্কুল, মাতুঙ্গায় পড়াশোনার সময় থেকেই তিনি গ্রীষ্মকালীন কাজ করে অর্থ উপার্জন শুরু করেন। চলচ্চিত্র পরিচালক রাজ খোসলার সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করার পর তিনি ১৯৭৪ সালে ‘মঞ্জিলেঁ অউর ভি হ্যাঁয়’ চলচ্চিত্র দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
তার কর্মজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ‘অর্থ’ (১৯৮২) ও ‘সারাংশ’ (১৯৮৪) চলচ্চিত্র দুটি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। ‘সারাংশ’ ১৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পায়। ১৯৮৬ সালে ‘নাম’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি বাণিজ্যিক সাফল্য পান। ১৯৮৭ সালে ভাই মুকেশ ভাটের সাথে বিশেষ ফিল্মস প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৯০-এর দশক মহেশ ভাটের জন্য ছিল অসাধারণ সময়। ‘আশিকি’ (১৯৯০), ‘দিল হ্যায় কি মানতা নাহিন’ (১৯৯১), ‘সড়ক’ (১৯৯১), ‘স্যার’ (১৯৯৩), ‘গুমরাহ’ (১৯৯৩), ‘ক্রিমিনাল’ (১৯৯৪) – এসব চলচ্চিত্র তাকে অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দেয়। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বহু পুরষ্কার অর্জন করেন। তার আত্মজীবনীমূলক ‘জখম’ (১৯৯৯) চলচ্চিত্রের জন্য নার্গিস দত্ত পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ‘জিস্ম’ (২০০৩), ‘মার্ডার’ (২০০৪), ‘ওহ লামহে…’ (২০০৬) সহ আরও অনেক চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।
মহেশ ভাটের ব্যক্তিগত জীবনও রহস্যময়। তিনি দুইবার বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী কিরণ (লরেইন ব্রাইট) এবং দ্বিতীয় স্ত্রী সোনি রাজদান। তাদের সন্তানরা হলেন পূজা ভাট, রাহুল ভাট, শাহিন ভাট এবং আলিয়া ভাট।
একজন সফল চলচ্চিত্র নির্মাতার পাশাপাশি, মহেশ ভাট লেখক ও বক্তা হিসেবেও পরিচিত। তিনি U.G. Krishnamurti-এর জীবনী লিখেছেন এবং অনেক বই সম্পাদনা করেছেন।
মহেশ ভাটের অবদান ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্মরণীয় থাকবে। তিনি একজন প্রতিভাবান নির্মাতা যিনি তার কাজের মাধ্যমে দর্শকদের মনে গভীর ছাপ রেখেছেন।