ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং’ বা ‘র’ (RAW): একটি গভীর বিশ্লেষণ
ভারতের বহিঃগোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (Research and Analysis Wing), সংক্ষেপে ‘র’ (RAW) বা R&AW, ১৯৬৮ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধ এবং ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তৎকালীন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (IB) এর ব্যর্থতার পর নতুন গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে ‘র’ এর উদয় ঘটে। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান ছিলেন রামেশ্বর নাথ কাও।
‘র’ এর প্রধান কাজ হল বিদেশী সরকার, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং ভারতের নীতিনির্ধারকদের কাছে তথ্য সরবরাহ করা। এছাড়াও কাউন্টার টেরোরিজম, গোপন অভিযান, পরমাণু কর্মসূচির নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ‘র’ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ‘র’ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতি দায়বদ্ধ।
নিয়োগ প্রক্রিয়া:
প্রথমদিকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হতো, পরবর্তীতে ১৯৭৩ সাল থেকে কঠোর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা, এবং একাধিক ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে এজেন্ট নির্বাচিত হয়।
প্রশিক্ষণ:
নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন এজেন্টদের দশ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেখানে গুপ্তচরবৃত্তি, গোয়েন্দা জ্ঞান, সাধারণ রীতিনীতি, বাণিজ্যিক কৌশল, তথ্য শ্রেণিবিন্যাস, স্পেস টেকনোলোজি, তথ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, বিভিন্ন বৈদেশিক ভাষা, ভৌগোলিক কৌশল ইত্যাদি শেখানো হয়। এছাড়াও ফিল্ড ইনটেলিজেন্স ব্যুরোতে ১-২ বছরের ফিল্ড প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। দেরাদুনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একাডেমিতেও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
অপারেশনসমূহ:
‘র’ অনেক গোপন অপারেশন পরিচালনা করেছে। উল্লেখযোগ্য অপারেশনের মধ্যে আছে পারমাণবিক কর্মসূচির রক্ষণাবেক্ষণ, সিকিমের ভারতের সাথে একীভূতকরণ, শ্রীলংকার তামিল টাইগারদের সহায়তা (যদিও পরে তা নেতিবাচক ফলাফল বয়ে এনেছে), পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির নজরদারি ইত্যাদি।
সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ:
‘র’ এর নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং পুলিশ সার্ভিস থেকে এজেন্ট নিয়োগের বিষয়ে সমালোচনা রয়েছে। আধুনিক গুপ্তচরবৃত্তিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব, পরিচয় ফাঁসের ঝুঁকি, আইএসআই এর সাথে প্রতিযোগিতা ইত্যাদি প্রধান চ্যালেঞ্জ।
‘র’ ভারতের একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে, যদিও নিয়োগ প্রক্রিয়া ও প্রশিক্ষণ নিয়ে সমালোচনা এবং চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তারপরও, এ সংস্থা ভারতীয় গোয়েন্দা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।