বিমল রায়: বাংলা চলচ্চিত্রের এক অমিত অবদান
বিমল রায় (জন্ম: ১২ই জুলাই, ১৯০৯ - মৃত্যু: ৮ই জানুয়ারি, ১৯৬৬) ছিলেন একজন বিশ্বখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক এবং প্রযোজক। তাঁর বাস্তববাদী ও সমাজচেতনামূলক চলচ্চিত্রগুলি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছে।
প্রাথমিক জীবন:
১৯০৯ সালের ১২ই জুলাই ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ঢাকার (বর্তমান বাংলাদেশ) সূত্রাপুরে এক জমিদার পরিবারে বিমল রায়ের জন্ম। ঢাকার জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময় তাঁর বাবার মৃত্যু হয়, এরপর তিনি মা ও ভাইদের নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন।
চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা:
ছোটবেলা থেকেই ক্যামেরার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল বিমল রায়ের। নীতিন বসুর হাত ধরে নিউ থিয়েটার্সে ক্যামেরা সহকারী হিসেবে তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা। পরবর্তীতে প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘দেবদাস’ ছবির প্রচারের জন্য ছবি তোলার কাজেও জড়িত ছিলেন। মেধা ও পরিশ্রমের বলে তিনি ‘দেবদাস’ ছবির সিনেমাটোগ্রাফার ও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। পরে নিজেই পরিচালনায় ‘দেবদাস’ ছবির পুনঃনির্মাণ করেন।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র:
১৯৪৪ সালে নিউ থিয়েটার্সের বাংলা ছবি ‘উদয়ের পথে’ (যার হিন্দি সংস্করণ ‘হামরাহী’) পরিচালনা করেন বিমল রায়। শ্রেণী সংগ্রামের উপর নির্মিত এই ছবি সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। দেশভাগের পর তিনি মুম্বাইয়ে বসতি স্থাপন করেন এবং ‘বম্বে টকিজ’-এর সাথে যুক্ত হন।
১৯৫৩ সালে তিনি নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘বিমল রায় প্রোডাকশন’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রথম চলচ্চিত্র ‘দো বিঘা জমিন’ নির্মাণ করেন। ইতালীয় নিও-রিয়ালিস্ট চলচ্চিত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত এই ছবি কান চলচ্চিত্র উৎসবে আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। ‘দো বিঘা জমিন’ ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
এর পরে তিনি ‘পরিণীতা’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘দেবদাস’, ‘মধুমতী’, ‘সুজাতা’, ‘পরখ’, ও ‘বন্দিনী’ সহ আরও অনেক সফল ও সমাদৃত ছবি নির্মাণ করেন। তাঁর ছবিগুলিতে সমাজের নানা বাস্তবতা, শ্রেণিবৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
সম্মান ও পুরস্কার:
বিমল রায়ের চলচ্চিত্রগুলি বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে। তিনি বহু ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং কান চলচ্চিত্র উৎসবের পুরস্কার লাভ করেছেন।
মৃত্যু:
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৬৬ সালের ৮ই জানুয়ারি মাত্র ৫৬ বছর বয়সে বিমল রায়ের মৃত্যু হয়। তবে তাঁর সৃষ্টি চলচ্চিত্রগুলি তাঁকে চিরকালের জন্য বাংলা ও ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে অমর করে রেখেছে।