ঋত্বিক ঘটক: বাংলা চলচ্চিত্রের এক অমিত্র প্রতিভা
ঋত্বিক কুমার ঘটক (৪ নভেম্বর ১৯২৫ - ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬), বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অম্লান প্রতিভার নাম। তার জন্ম অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের রাজশাহী শহরের মিয়াঁপাড়ায়। ছেলেবেলা কাটে কলকাতায় দাদা মণীশ ঘটকের সাথে, পড়াশোনা দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি রাজশাহী ফিরে যান এবং সেখানকার পৈতৃক বাড়িতে শৈশব ও কৈশোর কাটান। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি, তিনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে নাট্যচর্চায় জড়িত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পরে তার পরিবার কলকাতায় চলে আসে।
ঋত্বিক ঘটক সত্যজিৎ রায় ও মৃণাল সেনের সমকালীন হলেও তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণ শৈলী ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি অত্যন্ত ব্যক্তিগত ও আবেগঘন ছবি তৈরি করতেন, যা তাকে একই সাথে প্রশংসিত ও বিতর্কিত করে তুলেছিল। তাঁর ছবিগুলিতে দেশভাগের বেদনা, শরণার্থীদের দুর্দশা, এবং মানুষের অস্তিত্বের সংকট প্রকট ভাবে প্রতিফলিত হয়।
১৯৫০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ পরীক্ষা ছাড়াই ছাড়েন। ১৯৫১ সালে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (আইপিটিএ) যোগদান করেন এবং নাটক লেখা, পরিচালনা ও অভিনয়ে নিজেকে মেলে ধরেন। ১৯৫১ সালে নিমাই ঘোষের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ‘ছিন্নমূল’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করে। ১৯৫৩ সালে ‘নাগরিক’ ছবির মাধ্যমে একক পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
তাঁর কিছু বিখ্যাত চলচ্চিত্র হল মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০), কোমল গান্ধার (১৯৬১), সুবর্ণরেখা (১৯৬২), এবং তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩)। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এবং ২০০৭ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ভোটে সেরা বাংলাদেশী চলচ্চিত্র হিসেবে স্থান পায়। ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রগুলিতে অসাধারণ চিত্রনাট্য, অসাধারণ দৃশ্যধারা এবং মানুষের জীবনের গভীরে ঢুকে পড়া দর্শন প্রকট। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের এক অমূল্য সম্পদ ছিলেন এবং তার অবদান সর্বদা স্মরণীয় থাকবে।