বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি): এক অম্লান ইতিহাসের সাক্ষী
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে দেশের ইতিহাসে গভীরভাবে জড়িত। ১৯৬৪ সালের ২৫শে ডিসেম্বর পাকিস্তান টেলিভিশন কর্পোরেশনের অংশ হিসেবে ঢাকার ডি.আই.টি ভবন (বর্তমান রাজউক ভবন) থেকে যাত্রা শুরু করে। বিশ্বের প্রাচীনতম বাংলা ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে বিটিভির অবদান অপরিসীম। মুস্তাফা মনোয়ার, জামান আলী খান ও মনিরুল আলম প্রমুখ প্রথম প্রযোজক হিসেবে এর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফেরদৌসী রহমানের কণ্ঠে আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা ‘এই যে আকাশ নীল হল আজ’ গানটি বিটিভির প্রথম প্রচারিত অনুষ্ঠানে সবার হৃদয়ে স্থান করে নেয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিটিভি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২৩শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর টেলিভিশনে পাকিস্তানের পতাকা ও জাতীয় সংগীতের পরিবর্তে বাংলাদেশের পতাকা ও জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ প্রচারিত হয়। এই ঘটনায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ডি.আই.টি ভবনে অভিযান চালালেও, বাংলাদেশের মানুষ টেলিভিশন শিল্পের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান টেলিভিশনের ঢাকা কেন্দ্র বাংলাদেশ টেলিভিশন নামে পুনঃনামকরণ করা হয়।
১৯৮০ সালে বিটিভি রঙিন সম্প্রচার শুরু করে, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম আনুষ্ঠানিক পূর্ণরঙিন সম্প্রচারের সূচনা করে। ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও, বেসরকারি চ্যানেলের আগমনের পর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে। তবে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আজ রবিবার’ সহ অনেক জনপ্রিয় ধারাবাহিক ও অনুষ্ঠান বিটিভি দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছে। বিটিভি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননাও অর্জন করেছে, যেমন ১৯৯৭ সালে ঘূর্ণিঝড়ের কভারেজের জন্য এশিয়াভিশন অ্যাওয়ার্ড।
বিটিভি দুটি পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র (ঢাকা ও চট্টগ্রাম) এবং ১৪টি উপকেন্দ্র চালায়। ২০০৪ সালে বিটিভি ওয়ার্ল্ড চালু করে আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট সম্প্রচার শুরু করে। ২০১১ সালে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন চালু করে। ২০১৬ সালে দেশের প্রথম টেলিভিশন জাদুঘর উদ্বোধন করে। বর্তমানে বিটিভি ডিজিটাল ও এইচডি সম্প্রচার সহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করছে। বিটিভি ২০২৩ সালের মধ্যে আরও ছয়টি আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি বাংলাদেশের টেলিভিশন ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।