বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি): বাংলাদেশের কৃষি খাতের অগ্রদূত
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), বাংলাদেশের একটি সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের তৃতীয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রথম বিশেষায়িত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, শিক্ষাঙ্গনের আয়তনের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও বটে। বর্তমানে, ৪৪টি বিভাগ নিয়ে বাকৃবি কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখছে।
প্রতিষ্ঠার সময় এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে দুটি অনুষদ (ভেটেরিনারি ও কৃষি) নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও, স্বাধীনতার পর এটি স্বাধীন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিতি লাভ করে। ক্রমান্বয়ে, পশুপালন, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান, কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি, এবং মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ যুক্ত হয়। বর্তমানে ৬টি অনুষদ এবং ৪৪টি বিভাগ রয়েছে।
বাকৃবি কৃষি খাতে অসামান্য গবেষণার জন্য বিখ্যাত। বিভিন্ন ধান, সরিষা, সয়াবিন, আলু, মুখীকচুর জাত উদ্ভাবন, উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি, জৈব সার উৎপাদন, পোকামাকড় প্রতিরোধ, পশুপালন ও মৎস্য চাষে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বাকৃবির অবদানের কিছু উদাহরণ। ব্রুসেলোসিসের 'হিট ফিল্ড ভ্যাকসিন' উদ্ভাবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্যও বাকৃবি সমাদৃত। বাকৃবির বিজ্ঞানীরা লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছেন, যা কৃষি খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে, প্রায় ১২৬১ একর জায়গা নিয়ে বিশাল ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাকৃবি। মূল প্রশাসন ভবন ছাড়াও, বিভিন্ন অনুষদীয় ভবন, গ্রন্থাগার, মিলনায়তন, ছাত্রাবাস (১৩টি হল, ৪টি ছাত্রী হল), স্বাস্থ্য কেন্দ্র ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে কৃষিবিদদের জন্য চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদা ঘোষণা করেন, যা বাকৃবির গুরুত্ব ও অবদানের প্রতিফলন। আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা অ্যালপার ডজার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্সেও বাকৃবির উল্লেখযোগ্য অবদান স্পষ্ট। ওয়েবম্যাট্রিক্স বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং ২০১৭ অনুসারে এটি বাংলাদেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল।
বাকৃবি কেবলমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়; এটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এক গবেষণা কেন্দ্র। এটি দেশের কৃষি উন্নয়নে অবদান রাখতে চলমান গবেষণা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে অব্যাহত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।