বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ: একটি গভীর বিশ্লেষণ
২০১৮ সালের শুরুতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ (পূর্বে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ) বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র সংগঠন। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ এর প্রধান লক্ষ্য। নুরুল হক নুর ও হাসান আল মামুন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। গণঅধিকার পরিষদের সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
২০১৮ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রায় ২০০০ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সংগঠনের প্রথম কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম আহ্বায়ক ছিলেন রাজু আহমেদ, যিনি পরবর্তীতে ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের সামনে হাসান আল মামুনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এই আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটা ব্যবস্থার সংস্কার। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য ৩০%, নারীদের জন্য ১০%, উপজাতিদের জন্য ৫% এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১% কোটা ছিল, যা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগে ব্যাপক বাধা সৃষ্টি করছিল বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে।
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ এবং ধর্মঘটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি জোরদার করে। সরকারের প্রাথমিক আশ্বাস সত্ত্বেও, আন্দোলন অব্যাহত থাকে। পুলিশের হামলার মুখোমুখি হতে হয় অনেক শিক্ষার্থীকে। উচ্চ আদালতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রিট পরবর্তীতে বাতিল হলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়।
১১ই এপ্রিল ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। তবে, গেজেট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকে। পরবর্তীতে, সরকার একটি কমিটি গঠন করে কোটা সংস্কারের কাজ শুরু করে।
এই দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ একটি শক্তিশালী ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়। ২০১৯ সালে এর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ রাখা হয়। সংগঠনটি বর্তমানে শিক্ষার্থীদের অধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছিল সংগঠনটি। ২৮ আগস্ট ২০২১ এবং ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে সংগঠনের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্যই কাজ করে না, দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতেও এর সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। গণতান্ত্রিক অধিকার এবং শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।