বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ইতিহাস, ভূগোল, জনসংখ্যা, অর্থনীতি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে একটি বিস্তারিত নিবন্ধ।
গৌরনদী, বরিশাল জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। এটি বরিশাল বিভাগের অংশ।
ভৌগোলিক অবস্থান:
গৌরনদী উপজেলার অবস্থান ২২°৫৮′২৫″ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১৩′৫০″ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। এটি উত্তরে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা, দক্ষিণে উজিরপুর উপজেলা, পূর্বে বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা এবং পশ্চিমে আগৈলঝারা ও গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত।
জনসংখ্যা ও গণনা:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, গৌরনদী উপজেলার জনসংখ্যা ছিল ১৮৮,৫৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯২,২০৯ জন এবং মহিলা ৯৬,৩৭৭ জন। মোট পরিবার সংখ্যা ছিল ৪১,৫৬১টি। উপজেলার সাক্ষরতার হার প্রায় ৬০.৯০%।
ইতিহাস:
গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামটি মুঘল আমলে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। ১৬শ শতাব্দীতে এখানে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের রাজত্বকালে কসবা মসজিদ নির্মিত হয়। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৬-১৬২৭) এক ইয়েমেনি ব্যক্তির সাত পুত্র ইসলাম প্রচারের জন্য বাংলায় আসে। দ্বিতীয় পুত্র কসবায় বসতি স্থাপন করে, এবং জাহাঙ্গীর নিজেই তাঁর সাথে দেখা করতে কসবায় যান বলে জনশ্রুতি আছে। এই ব্যক্তি, যিনি দুধ মল্লিক নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন এবং অনেক মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তিনি স্থানীয়দের কল্যাণে জলাশয় খনন করেন, যার মধ্যে পদ্মবুনিয়া, গোয়ালিয়া ও মালী মাজহর আন্ধি উল্লেখযোগ্য। দুধ মল্লিকের মাজারের জন্য সম্রাট জাহাঙ্গীর করমুক্ত জমি দান করেন, ফলে কসবা 'লক্ষেরাজ-কসবা' নামে পরিচিত হয়।
অর্থনীতি:
গৌরনদী উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। কৃষি, অকৃষি শ্রমিক, শিল্প, ব্যবসা, পরিবহন, চাকুরি, নির্মাণ, ধর্মীয় সেবা, ভাড়া ও প্রবাসী আয় এর প্রধান উৎস। এখানে ধান, গম, আলু, পান, শাকসবজি, আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু প্রভৃতি ফসল উৎপাদন হয়। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে।
যোগাযোগ:
গৌরনদী উপজেলায় পাকা, আধা-পাকা ও কাঁচা রাস্তা এবং নৌপথ রয়েছে।
শিক্ষা:
গৌরনদীতে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ অন্যতম।
সংস্কৃতি:
গৌরনদীর সংস্কৃতি বহুমুখী এবং এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে কসবা মসজিদ, নলচিড়া মাজার রয়েছে।
গৌরনদী উপজেলার আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য, বাংলাপিডিয়া, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এবং স্থানীয় সংবাদপত্র পর্যালোচনা করা যেতে পারে।